1. admin@daynikdesherkotha.com : Desher Kotha : Daynik DesherKotha
  2. arifkhanjkt74@gamil.com : arif khanh : arif khanh
  3. jonehaidar42@gmail.com : Daynik DesherKotha : Daynik DesherKotha
পাবনার আটঘরিয়ার তানিয়া দেখতে শিশুর মতো হলেও অনার্সে পড়েন তিনি - দৈনিক দেশেরকথা
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্বৈরাচার পতনে বাক স্বাধীনতা  ফিরে পেয়েছে গণমাধ্যম টাঙ্গাইলে সাবেক এমপি ছোট মনিরের নির্দেশে মশাল মিছিল, ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪জন গ্রেফতার। গলাচিপায় সাংবাদিক সহ এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে ‘গরীবের হাসপাতালে’ র‍্যাবের চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ। হবিগঞ্জ বিজিবি’র অভিযান, ৩ কোটি টাকার চোরাই পণ্য আটক জামালপুরের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান। সংবাদ প্রকাশের জেরঃ মাদক ব্যাবসায়ীদের হামলায় সাংবাদিক কামাল আহত বেনাপোল সীমান্তে  হিরোইন সহ ভারতীয় নাগরিক আটক চোখে দেখা অবাস্তব  নির্বাচন এলেই স্বপ্ন দেখান ব্রিজ করে দেওয়ার; নির্বাচিত হলেই আর খোঁজ নেয়না জনপ্রতিনিধিরা মিরপুর উপজেলা উন্নয়ন কমিটি গঠিত

পাবনার আটঘরিয়ার তানিয়া দেখতে শিশুর মতো হলেও অনার্সে পড়েন তিনি

মোহাম্মদ আলী স্বপন
  • প্রকাশ বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২
desherkotha

 235 বার পঠিত


পাবনা প্রতিনিধি>পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বেরুয়ান গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাইজুল ইসলাম ও নাসিমা খাতুন দম্পতির মেয়ে তানিয়া। দেখতে ৭-৮ বছরের শিশুর মতো। দেখে বোঝার উপায় নেই শিশুর মতো দেখতে এই মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক, পড়েন অনার্সে। জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তানিয়ার জন্ম ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল।

বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠন হয়নি তার। তিন ভাইবোনের মধ্যে তানিয়াই প্রথম। তিনি আটঘরিয়া সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের ৪-৫ বছর পর যখন তারা বুঝতে পারেন যে, তানিয়া বড় হচ্ছে না। তখন তারা ডাক্তারের সরণাপন্ন হন। প্রথমে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, মেয়েটির অনেক দিন উন্নত চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে ৩-৪ মাস ওষুধ খাওয়ানোর পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। আর তানিয়াও ঠিক হয়নি।বয়স অনুযায়ী বেড়ে না উঠায় সমাজে অনেক অবহেলার শিকার হচ্ছেন তানিয়া। তবে পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহী তিনি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষও তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। সমাজের লোকও তাকে বাঁকা চোখে দেখেন।

তারপরও অদম্য তানিয়া থেমে থাকেননি। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তানিয়া চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। বেরুয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, ২০১৯ সালে বেরুয়ান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০২১ সালে বেরুয়ান মহিলা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।তানিয়ার বাবা তাইজুল ইসলাম বলেন, টাকার অভাবে আমার মেয়েকে আমি চিকিৎসা করাতে পারিনি। কিন্তু তানিয়ার আগ্রহে অনেক কষ্টে হলেও ওকে লেখাপড়া করাচ্ছি। কিন্তু অনেকেই অনেক কথা বলে।

পড়াশোনা করে লাভ নেই, ও ছোট, ওর চাকরি হবে না। এ রকম অনেক কথা মানুষ বলে। তারপরও আমি তাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। কিন্তু এখন তার লেখাপড়ার খরচ নিয়েই চিন্তায় আছি, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। এখনো মাঝে মধ্যে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা জরুরী প্রয়োজন।

কিন্তু আমি সংসার চালাতেই হিমশিম খাই, চিকিৎসা করাব কীভাবে?তানিয়াকে নিয়ে শঙ্কার ছাপ মা নাসিমা খাতুনের চোখেও। তিনি বলেন, আমার মেয়ে অনেক ছোট হওয়ায় সমবয়সীরা তার সঙ্গে মেশে না। ওর বয়সী অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে সংসার করছে। অনেক মানুষ অনেক কটূক্তিমূলক কথা বলে। মাঝে মধ্যে স্কুল-কলেজ থেকে অভিমান করে বাড়ি ফিরে আসতো।

তারপরও আমার মেয়ে পড়ালেখা করছে। এটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। এখন সরকারের কাছে আমার আবেদন- যেন তানিয়ার জন্য কিছু একটা করে। কারণ আমাদের অবর্তমানে ও যেন কারো বোঝা না হয়ে যায়।অবহেলার শিকার হলেও স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা তানিয়ার। তিনি বলেন, ক্লাসে গেলে অনেক বন্ধুরা আমাকে ভ্যাটি বলে ডাকে, অনেকেই আমার সঙ্গে ক্লাসে বসতে চায় না, খেলতে চায় না। প্রতিবেশী বন্ধুদের অনেকে আমাকে তাড়িয়ে দেয়।

আমার বন্ধুরা বড় হওয়ায় আমাকে খেলতে নেয় না, আবার ছোটদের সঙ্গে খেলতেও ভালো লাগে না।তানিয়া বলেন, আমার ইচ্ছে আছে আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু মানুষ বলে, তুমি খাটো মানুষ আইনজীবী হতে হলে লম্বা-বড় হতে হয়। তারপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। কিন্তু আমার বাবা-মা অনেক দরিদ্র হওয়ায় আমার পড়ালেখার খরচও দিতে পারছে না।

 নিউজ পাবনার ফেসবুক পেজে ভিডিও সংবাদ প্রকাশিত হলে বেশ কিছু দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তানিয়া খাতুনকে নিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগে।বিষয়টি পাবনা জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তানিয়া খাতুনের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এর  প্রেক্ষিতে আটঘরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানিয়াকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।

আটঘরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শরিফুল আলম বলেন, সে যখন আমাদের এখানে ভর্তি হতে আসে তখন আশ্চর্য হয়ে যাই। পরে জানতে পারি তার শারীরিক সমস্যা আছে। তারপর কলেজ কর্তৃপক্ষ তার লেখাপড়ার সকল খরচ ফ্রি করে দিয়েছে।

পরীক্ষার ফি, টিউশন ফি, বই-খাতাসহ সকল খরচ কলেজ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। আমরা তার সহপাঠীদেরও বলে দিয়েছি যেন তার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে।  আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, তানিয়া একজন সংগ্রামী তরুণী। মেধার গুণেই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও সে আজকে অনার্সে পড়ছে।

আমি তাকে ইতোমধ্যেই প্রতিবন্ধী ভাতা ও কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। এখন থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য খরচও আমি বহন করব। এছাড়াও তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কর্মসংস্থানের চেষ্টাও করব।আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, তানিয়া খাতুনের মধ্যে যে স্পীড রয়েছে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তার পড়াশোনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

দেশেরকথা/বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা

এই সাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।কপিরাইট @২০২০-২০২৫ দৈনিক দেশেরকথা কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park