161 বার পঠিত
মণিরামপুর প্রতিনিধি>চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডু ট্রাজেডিতে অগ্নিদগ্ধ অগ্নিযোদ্ধা মনিরামপুরের গাউসুল আযম (২৫) আটদিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থেকে অবশেষে সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন পরপারে। ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনষ্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে (ইন্নালিল্লাহী—–রাজেউন)।
অকুতোভয় অগ্নিযোদ্ধা গাউসুলের জীবনাসনের খবরে তার প্রিয় জন্মভূমি মনিরামপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে পিতা-মাতা। বিলাপ করছে সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী খাতুন কাকলি খাতুন। গাউসুলের ছয়মাস বয়সী একমাত্র সন্তান সিয়াম ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে এখনও বুঝতে পারেনি তার জন্মদাতা প্রিয় বাবা আর নেই।
রোকবার বিকেলে গাউসুল আযমের গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের খাটুয়াডাঙ্গায় সরেজমিন দেখাযায়, গাউসুলকে শেষবারের মত দেখতে বাড়িতে লোকে লোকারন্য। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবরে পিতা আজগার আলী, মা আছিয়া বেগম, স্ত্রী কাকলি খাতুনসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ তাদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। এ সময় অধিকাংশ মানুষের চোখ দিয়ে পানি পড়তে দেখাগেছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় গাউসুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছেনি। গাউসুলের ভগ্নিপতি বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে গাউসুলের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌছতে রাত ১০ টা বাজতে পারে। ফলে ওই রাতেই খাটুয়াডাঙ্গা ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
তিনি আরও জানান, ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকদিন আগে গাউসুলের অবস্থার বেশ উন্নতি হলে তাকে আইসিইউ থেকে সাধারন বেডে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার ভগ্নিপতির সাথে গাউসুলের কথাও হয়। মিজানুর রহমান জানান, এসময় গাউসুল বার বার তার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু তারা বাড়িতে থাকায় শেষ ইচ্ছা পূরন হয়নি তার।
এ দিকে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন কর্মকর্তা প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, রাতেই খটুয়াডাঙ্গা গ্রামে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রিয় মার্যাদায় গাউসুল আযমের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের অধিদপ্তরে গাউসুল আযমের প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহের কফিনে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো:মাইন উদ্দিন পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
উল্লেখ্য উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগার আলীর একমাত্র ছেলে গাউসুল আজম ফায়ারম্যান(অগ্নিযোদ্ধা) হিসেবে ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তার কর্মস্থল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ষ্টেশনে। তবে ৬ মাসের ডেপুটেশনে (প্রেষন) কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে।
৪ জুন রাত ৮টার দিকে যখন চট্টগ্রামের কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেই সেখানে ছুটে যান গাউসুল আযমসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে তার সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান গাউসুল আজম। তবে তার শরীরের ৭৫ ভাগ অগ্নিদগ্ধ হয়। সেদিন রাতেই তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনষ্টিটিউটে আনা হয়। সেখানে আইসিইউতে গাউসুল চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে অগ্নিযোদ্ধা গাউসুল আযমের অকাল মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান, সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেনসহ বিভিন্ন মহল।