229 বার পঠিত
লাউ কিংম্বা সীমের মাচায়, বাড়ির আঙিনায় যে পাখিকে কমসময়ে নাগালের বাইরে উড়ে বেড়াতে দেখা যেত, আনাচ-কানাচে শিস বাজিয়ে মিষ্টি সুরে বিমোহিত করত, সেই পাখিকে এখন আর তেমন দেখা যায় না। কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার নোটেই যেন তার দেখা মেলে। সবুজ প্রকৃতির সাথে জুড়ে থেকে মানুষকে বিমোহিত করা পাখি আজ কোথায়?
একটা সময় ছিল, যখন পাখিটার আনাগোনায় প্রকৃতি সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। বাড়ির চারপাশে ছিল যার অবাধ বিচরণ। সকালবেলা সূর্য ওঠার সাথে সাথে মিষ্টি সুরের মূর্ছনায় মানুষের ঘুম ভাঙাত পাখিটি। যেন মানুষের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক, আর সেই সম্পর্কে থেকে বাঁশির সুরে মানুষকে ভালোবাসা দিত পাখিটি। সাদা ও কালো রঙের স্মৃতিবিজড়িত পাখিটি এখন আর তেমন দেখা যায় না। টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙা ইত্যাদি পাখি বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর চোখে পড়ে না। বাঁশ , কাঁঠাল, পেঁপে, নারকেল শজনেগাছে অথবা বাড়ির ছাদে পাখিটিকে সব সময় দেখতে পাওয়া গেলেও এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। ধারণা করা হচ্ছে, নদীভাঙনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে নতুন ঘরবাড়ি। এ ছাড়া অধিক জনসংখ্যার প্রভাবে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন বাড়ি তৈরি করতে গাছ কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে নির্বিচারে। খাদ্যসংকট আর যথাযথ বাসযোগ্য স্থানের অভাবে এরা আজ বিলুপ্তপ্রায়।
অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারিরা বিভিন্ন রকম ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে বহু পাখি। প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি না থাকায় শিকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এসব পাখি হারিয়ে যাচ্ছে।
পাখি প্রেমিক শামসুজ্জামান ডলার বলেন, যেহেতু দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি, তাই এই পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার। তা না হলে একসময় হয়তো আমাদের পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজাল থেকে হারিয়ে যাবে এই দোয়েলের মতো অন্যান্য পাখিও।
এ জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের ওপর বিধিনিষেধ জোরদার করা এবং সরকারি ও পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তা না হলে একটা সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ দেশের বন্য প্রাণী এবং ইতিহাস- ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন পাখি।