174 বার পঠিত
পূর্ব ঘটনার জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় হলের প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো. সায়েম, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী ইকবাল হোসাইন, মবিনুল বারি রাকিব, অনুপ দাস, নজরুল হলের সাকিব হাসান দীপ, আশরাফুল রায়হানসহ দুই পক্ষের প্রায় ১৫ জন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তারা চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দুই হলের মধ্যবর্তী সড়কে বাঁশ, গাছের ডাল, রড নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে এবং ইট ছুঁড়ে মারে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হোসেইন উপস্থিত হয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে হলের মূল ফটক আটকে দেন।
এরপর কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ ঘটনায় কাজী নজরুল ইসলাম হলের হল প্রশাসন কাউকে দেখা যায়নি। ঘটনার শেষ পর্যায়ে এই হলের হাউজ টিউটর মো. এনামুল হক উপস্থিত হন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে আছি। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু আমাদের হল প্রশাসনের কাউকে পাইনি। এটা দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া আর কিছু না।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট মিহির লাল ভৌমিককে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঘটনাস্থলে থাকা নজরুল হলের হাউজ টিউটর মো. এনামুল হক বলেন, ঘটনা জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। নজরুল হলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজে যাওয়ার পথে সাইড চাওয়াকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল রায়হান নামাজে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদকে সাইড দেওয়ার কথা বলে। এ সময় সেলিম আহমেদের কাঁধে ধাক্কা লাগে।
নামাজ শেষে এ নিয়ে সেলিম ও রায়হানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে সেলিম, সেলিমের বন্ধু মাহবুব ও রায়হান একে অপরের প্রতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়।
ঘটনার রেশ ধরে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম আবরারের ওপর অতর্কিত হামলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদসহ আরও কয়েকজন। এরপর রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন একটি দোকানে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রায় ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। সেই থেকে দুই হলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হল প্রশাসন উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী নেওয়া হবে, তার জন্য সকালে আমরা সবাই মিলে আবার বসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি ঘটনাটা দেখেছি। দুই হলের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হলে পাঠিয়েছি। যেহেতু দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে, সে জন্য প্রেসিডেন্টসহ বসে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিব বলেন, আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। যতটুকু শুনেছি দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংগঠন থেকে নেওয়া হবে।
কাজী নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, বঙ্গবন্ধু হলের ছেলেরা আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভেতরে রাখার চেষ্টা করেছি। এরকম নৃশংস হামলার বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করেছি। পরবর্তীকালে হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।