598 বার পঠিত
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি> নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ছন খড়-কুটার ছাউনি দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর। এক সময় এ অঞ্চলের গ্রামের সাধারণ শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের নিশিথে আশ্রয়ের প্রধান ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই কুঁড়েঘর। গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসিবাড়ি নামে পরিচিত ছিল এই ঘরগুরো। একসময় গ্রামে কুঁড়েঘরের তুলনায় ইট কিংবা টিনের ঘর ছিল খুবই কম। কিন্তু আজ তা কালের আবর্তে সম্পূর্ণ বিপরীত।
আগের গ্রামের সাথে বর্তমান গ্রামের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। রোজগার জীবনের মানন্নোয়নে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণবন্ত জীবনের গ্রামীণ ঐতিহ্যের নিদর্শন কুঁড়েঘর। আজ থেকে ২০/২৫-বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত পরিবেশ বান্ধব ছন, বাঁশ, খড়ের ছাউনিতে চৌচালা কুঁড়েঘর। বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও একটা কুঁড়েঘর নজরে পড়ে না। যদিও বা কালে ভাদ্রে এক-আধটি চোখে পড়ে সেগুলোর অবস্থা খুবই জীর্ণ দশা।তৎকালিন সময় কুঁড়েঘর ছাউনির প্রধান উপকরণ ছিল ছনকশ।
শ্রমজীবী মানুষেরা ছন এবং ধানকাটার পর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে নিপুন হাতে তৈরি করত এই ঘর। এই ঘর তৈরিতে যারা পারদর্শী তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় ছাফরবন্ধ বলা হয়। আগে ছন (কাশিয়ার) চাষাবাদ ব্যাপক হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেই জমি ফসলিতে রুপ নেয়ায় এর চাষাবাদ এখন নেই বললেই চলে। আজ কারিগররাও হারিয়ে গেছে। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠছে ইট-কাঠ, পাথরের দালান। ফলে অতীত ঐতিহ্যের চিরচেনা কুঁড়েঘরের প্রচলন চোখে পড়েনা। আধুনিক যুগেও কুঁড়েঘর উঁকি দিচ্ছে উপজেলার বাহাগিলী ইউপি‘র উঃ দুরাকুটি নয়ান খাল বৈদ্য পাড়ার আছাদুলের বাড়িতে। এখনো তার উঠোনে ২টি কুঁড়েঘর দেখা গেছে।
তিনি জানান, এ গ্রামে শুধু আমাদের দু‘টি কুঁড়েঘর রয়েছে। সবাই এখন ইট, সুরকি, টিনশেড দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্যের পাশাপাশি টিনের ঘর তৈরির সামর্থ্য না থাকায় খড়কুটোর ঘরই মোদের সম্বল। কুঁড়েঘরে বসবাস যেমন শান্তি তেমনি আরামদায়ক এবং স্বাচ্ছন্দময়। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এমদাদুল হক জানায়, বর্তমানে ছনের অভাব,খড়,বাঁশ ও শ্রমিকের দাম বেশী হওয়ায় এবং প্রতি বছর কুঁড়েঘর মেরামত করতে হয় তাই গ্রামের মানুষ এখন কষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদী পাকা, আধাপাকা টিনের ঘর তুলছে।
আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামীণ প্রতিটি কর্মেই ফিরে দেখার আবাস ফিরে পাই। যখন দেখি সেই শৈশবের দিনগুলি সত্যিই আমাদের প্রেরণা যোগায়। বিশেষ করে এই কুঁড়েঘর গরমে যেমন শীতল ছাঁয়া আবার শীত কালেও ঘর থাকে উঞ্চ। চৈত্রের তাপদাহ আর জ্যৈষ্ঠের প্রখর গরমে কুঁড়ে ঘরই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের শান্তির স্বর্গ। আধুনিক যুগে চিরায়িত বাংলার, বাঙালীর আজন্ম স্মৃতি চিহৃটির কুঁড়েঘর এখন স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাচ্ছে। হয়ত সেদিনটি খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন কুঁড়েঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম রূপকথার গল্পেই এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।সাথে ছবি আছে।