47 বার পঠিত
সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস)।বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে নারী শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শান্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার এবং নারী ও শিশুদের উন্নয়নের জন্য কাজ করা এ সংস্থাটি।
লফস জানায়, শুধুমাত্র রাজশাহীতেই গত তিন মাসে (জানুয়ারি-৯ মার্চ) ৩১ জন নারী ও শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে।
৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষ্যে সংস্থাটি তার নিজেস্ব ডকুমেন্টসেল থেকে গত ৩ মাসে (জানুয়ারী- ৯মার্চ পর্যন্ত) রাজশাহী জেলার নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ করে।এরমধ্যে হত্যা ৩, হত্যার চেষ্টা ০২, আত্নহত্যা ০৫, আত্নহত্যার চেষ্টা ০৫, ধর্ষণ ০৪, গণধর্ষণ ০১, ধর্ষণের চেষ্টা ০৩, যৌন নির্যাতন ০১, নির্যাতন ০৫, নিখোঁজ ০২ জন নারী ও কন্যা শিশু।
বিজ্ঞপ্তিতে লফস জানায়, ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন ” স্লোগানে পালিত হলো এবারের নারী দিবস। নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের দিবস।বর্তমান সরকার নারীদের উন্নয়নে বহুমাত্রিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। নারীদের বিচরণ এখন সবত্র।একই সাথে আমাদের দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন সন্ত্রাস ও পর্নোগ্রাফী।আমাদের রাজশাহী জেলাও এর বাইরে নয়।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন।এছাড়া নারীরা এখনো নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। নারীদের শ্রম মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, নারীকে সম্মান দেখানোর জন্য পরিবর্তন হয়নি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির। ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বেশি।
উন্নয়ন সংস্থা লফস সমাজের নারী নেত্রী, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী সরকারী/বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সহ সমাজের বিজ্ঞজন ও জনসাধারনের সাথে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলে এবং তথ্য অনুযায়ী জানা যায়- পারিবারিক কলহ, প্রেম ঘটিত কারনে হত্যা ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মতো ঘৃনিত অপরাধ ঘটছে অহরহ যা প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বা আইনের ফাঁকে অপরাধীরা বেড়িয়ে আসছে। একই ভাবে যৌতুক ও বাল্যবিবাহ’র ফলে নারী ও কন্যা শিশুরা প্রতি নিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে এর ফলে সংসারে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া প্রেম নারীর জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলছে। সোস্যাল মিডিয়া মাধ্যমে ব্ল্যাক মেইলিং এর প্রবনতা দিন দিন বাড়ছে যার একটি বড় অংশ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তরুনীরা। নতুন করে মব তৈরী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ৮ বছেরর শিশু তার পরিবারের কাছে নিরাপদ নয়।
এমন বাস্তবতায় লফস মনে করে, নারী শিশু নির্য়াতন প্রতিরোধে নারীদের নির্ভয়ে প্রতিবাদ ও আইনী সহায়তা গ্রহন করা উচিৎ।সমাজের অপরাধ প্রবনতা কমাতে দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, শাস্তি নিশ্চিত করা ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে নারী শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শান্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস) অত্র জেলায় দীর্ঘদিন যাবৎ নারী ও শিশুর উন্নয়নে কাজ করছে। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে লফস সংস্থার ডকুমেন্টেশন সেল থেকে রাজশাহীর প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিত নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে।