21 বার পঠিত
টাকা ছাপিয়ে দুর্বল দুটি ব্যাংককে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকার ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক দুটি হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিট ইসলামী ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে দেড় হাজার কোটি টাকা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে এই দুটিসহ ৯টি দুর্বল ব্যাংকে টাকা ছাপিয়ে ২৫ হাজার ৯১০ কোটি টাকার ধার দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয় ৫ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংককে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।
পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এসব ব্যাংকের ক্ষত লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে ২০২২ সালের শেষদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির খবর গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে। তখন ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক অর্থ তুলে নেন। এতে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলো বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য সংরক্ষণ হিসেবে সিআরআর এবং সরকারি সিকিউরিটিজ হিসেবে এসএলআর রাখতেও ব্যর্থ হয়। এরপরও ব্যাংকগুলোকে নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখেন তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এর মধ্যে অন্যতম ছিল চলতি হিসাবে ঘাটতি ও টাকা ছাপিয়ে তারল্য দেওয়া।
যদিও বর্তমান গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়ে জানিয়েছিলেন- কোনো ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া হবে না। তবে সেই কথা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। এসব ব্যাংককে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে জামানত ছাড়াই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে সরাসরি টাকা দিলে এতে মূল্যস্ফীতি উসকে যায়।
গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, আমি বলেছিলাম, আমরা টাকা ছাপাব না। আগের সে অবস্থান থেকে আমি সাময়িকভাবে সরে এসেছি, পুরোপুরিভাবে নয়। আমরা সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে যে পরিমাণ তারল্যের জোগান দেব, বাজার থেকে সমপরিমাণ টাকা বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে তুলে ফেলব। এক হাতে টাকা দেব, অন্য হাতে বাজার থেকে তুলে নেব। এ কারণে প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি টাকা ছাপানো বলা যাবে না। বাজারে তারল্যের স্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জন্য ৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল প্রবর্তনের বিষয়টিও উল্লেখ করেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে গেলে সেখান থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তুলে ফেলব, যাতে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য ঠিক থাকে, তারল্য পরিস্থিতি ঠিক থাকে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের যে প্রচেষ্টা, সেটি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি না। নতুন এ প্রক্রিয়ার কারণে গ্রাহকের কোনো অসুবিধা হবে না। আবার বাজারকেও অস্থিতিশীল হতে দেব না।’
গভর্নরের সেই কথার সঙ্গে বাস্তবে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ, দুই মাসে ১০টি নিলামে বাজার থেকে মাত্র ৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে।