1. admin@daynikdesherkotha.com : Desher Kotha : Daynik DesherKotha
  2. arifkhanjkt74@gamil.com : arif khanh : arif khanh
  3. alaminjhalakati@gmail.com : Al-Amin Khan : Al-Amin Khan
প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ: উন্নয়ন ও নৈতিকতা - দৈনিক দেশেরকথা
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্বৈরাচার পতনে বাক স্বাধীনতা  ফিরে পেয়েছে গণমাধ্যম শাপলা চত্বরে গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা- ইমরানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া নামের আগে কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না: হাইকোর্ট কারাতে প্রতিযোগিতায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পদক অর্জন  ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা ।  সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে টাস্কফোর্স গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি বর্তমানে দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের ওপর হামলা: ডিএমপি বেনাপোল সীমান্তে সড়ক দূর্ঘটনা বিজিবি সদস্য নিহত, ১ আহত ১ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন ১৫ মার্চ শনিবার 

প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ: উন্নয়ন ও নৈতিকতা

ইবতেশাম রহমান সায়নাভ
  • প্রকাশ সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

 266 বার পঠিত

প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আমূল পরিবর্তন করেছে এবং আগামীতে এর প্রভাব আরও ব্যাপক হতে চলেছে। সারা বিশ্বে নতুন নতুন উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিক্স, এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির উন্নতি মানুষের জীবনধারা, কাজের ধরন এবং সমাজের কাঠামোকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তন করছে। তবে এই উন্নয়ন শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, এর সাথে সাথে মানবিক ও নৈতিক প্রশ্নও সামনে আসছে।

উন্নয়নের দিক

প্রযুক্তির একদিকে যেমন বৈশ্বিক অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, ক্রীড়াঙ্গন এবং পরিবেশের প্রতি প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে, এটি মানব জীবনে আরও সহজ করে দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের উন্নতির মাধ্যমে মানুষের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেটি বিভিন্ন শিল্পখাত যেমন স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং পরিবহন, যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যম এবং যোগাযোগের মাধ্যমে পৃথিবী একচেটিয়া ছোট হয়ে উঠছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এইসব প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রার গতিশীলতাকে আরও সহজ এবং কার্যকর করেছে। ই-কমার্স এর মাধ্যমে আমাদের পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ করেছে। আমরা আমাদের হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে ঘরে বসেই অর্ডার করে পণ্য হাতে পেয়ে যাই । বাসায় বসে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পরীক্ষার ফি প্রদান, অনলাইন ব্যাংকে লেনদেন করতে পারি। বাসায় বসেই আমরা বিনোদন যেমন টিভি, খেলাধুলা, নাটক, সিনেমা, ইসলামিক ভিডিও দেখতে পারি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিববারের সাথে যোগাযোগ করতে পারি শুধু তাই না আমরা ভিডিও কলে লাইভ দেখতে পারি। ভৌগলিক অবস্থান অর্থাৎ কোন ঠিকানা খুঁজে পেতে সহযোগীতা করছে আমাদের ইন্টারনেট ভিত্তিক গুগল অ্যাপস যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে। আয় রোজগার এর ব্যবস্থা হচ্ছে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। বর্তমানে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার এবং জিডিপিতে ৫ শতাংশ অবদান নিশ্চিত করা। ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদপ্তর, ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলার ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। ৮০০টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ২৫৪টি এগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (AICC) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের একটি উন্নয়নের মাইল ফলক হয়ে থাকবে। বর্তমানে দেশে প্রায় সকল জমির রেকর্ডের অনুলিপি অনলাইন থেকে ই-পর্চা সেবা সংগ্রহ করা যাবে । দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থান থেকে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে ই-পর্চা সংগ্রহ করা যাবে।

এছাড়াও, স্বাস্থ্যখাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি যেমন রোবট সার্জারি, জেনেটিক এডিটিং, দূরবর্তী চিকিৎসা (Telemedicine) মানুষের জীবন মানের গুণগত মান উন্নত করছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করছে, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ত্রুটি কমিয়ে আনছে।

নৈতিকতার প্রশ্ন

প্রযুক্তির এই উন্নয়ন কিছু নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করছে। একদিকে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবটের সাথে সহযোগিতা করছি, অন্যদিকে, আমরা প্রশ্ন করছি, এসব প্রযুক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব কতটুকু? প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, এবং কর্মসংস্থানের মতো নৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিশেষ করে অটো-প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে, মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন শিল্পখাতে যন্ত্র বা রোবট কর্মীদের কাজের জায়গা দখল করছে, যা অনেকের জন্য এক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে গোপনীয়তার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা আরও সহজ হয়ে গেছে, যা সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে, শুধু ব্যক্তিগত তথ্যই নয় একটি দেশের মেরুদন্ড অর্থনীতি সেই অর্থনীতির মূলধন বায়বীয় সাইবার ক্রাইম এর মধ্য দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি। ইতিপূর্বে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। আমরা আমাদের প্রযুক্তির অধিক নেশায় পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি লক্ষ্য করছি তরুণরা প্রবীনদের সেবা যত্ন করছে না। মামা, চাচা, দাদা-দাদি, ভাই-বোন সবার প্রতি উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্ত হওয়ায় স্বামী স্ত্রী তার পারিবারিক বন্ধন ধরে রাখতে পারছে না। বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদ যা আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ছেলেমেয়েরা টিকটক, জুয়া, অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে কেউ বা জিম্মি করে মোটা দাগে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবেই সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি উশৃঙ্খলা, পারিবারিক বিচ্ছেদসহ সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। তাছাড়া, প্রযুক্তি যখন আরও শক্তিশালী হচ্ছে, তখন আমাদের এই বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে? প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে মানবিক দৃষ্টিকোণ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সমন্বয় জরুরি। আমরা কি প্রযুক্তি দ্বারা মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রাখবো, না কি কেবল প্রযুক্তির শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো? এমন বিস্ময় সূচক প্রশ্নের জবাব অজানাই থেকে যাবে!

ভবিষ্যতের দিকে

ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও নৈতিকতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের একটি ভাল পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের অন্যান্য অংশীদারদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশীয় সাইবার ক্রাইমের পাশাপাশি বিদেশী সাইবার হামলার শিকার হচ্ছি। তাই আমাদের রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত, সামরিক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের, সাইবার হামলার অগ্রিম বার্তা গ্রহন এবং প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে বিশ্বের সাইবার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কর্মী তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু তার জন্য প্রযুক্তির নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার প্রতি সঠিক মনোভাব গ্রহণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু প্রযুক্তি নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে, আমাদের অবশ্যই এর নৈতিক ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ানোর পাশাপাশি নৈতিকতা, অতিমাত্রায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়ন এবং আইনগত কাঠামো তৈরি করে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। যদি আমরা সঠিক পথে চলতে পারি, তবে প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যতকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গঠন করতে সহায়ক হতে পারে।

ধন্যবাদান্তে

মোঃ মনজুরুল ইসলাম

লেখক প্রযুক্তিবিদ

ইমেইল- diumanju@gmail.com

দেশেরকথা/বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা

এই সাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।কপিরাইট @২০২০-২০২৫ দৈনিক দেশেরকথা কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park