195 বার পঠিত
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় সুদের টাকা পরিশোধের পরও মোক্তার হোসেন(৪৯) নামের এক সুুদ ব্যবসায়ীর ফাঁকা চেকের মামলায় দুই নারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানা হাজতে রেখেছে।
গ্রেপ্তারতারকৃতরা হলেন, হাতিয়া পৌরসভা ৯ নং ওয়ার্ড গুল্লাখালী গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী পিংকি বেগম(২৮) এবং শুন্যেরচর গ্রামের দিদারের স্ত্রী নাজমা বেগম(৪০)। ভুক্তভোগী পিংকি ওরফে সুরাইয়া আক্তারের ভাই মিলন জানান, দুই বছর আগে তার ভগ্নিপতি দেলোয়ার সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন থেকে সুদের উপর ৫০ হাজার টাকা নেয়, যার প্রতি মাসে কিস্তি ১ হাজার ৫০০ টাকা। যাহা কিছুদিন আগে তার ভগ্নিপতি দেলোয়ার বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে তার বোন পুরোটাকা পরিশোধ করে দেয়। কিন্তু তার ভগ্নিপতি থেকে যে সাদা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা চেক নিয়েছিল তা আর ফেরত দেইনি এবং ওই স্ট্যাম্পে তার বোনের কোন স্বাক্ষর ছিল না বলেও জানান ভুক্তভোগীর ভাই মিলন। তিনি আরো জানান ওই ফাঁকা চেক এবং স্ট্যাম্প দিয়ে সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন সে তার মতো করে ২ লক্ষ টাকা লিখে নিয়ে মামলা সাজিয়ে তার বোনকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায়।
একই রকম হয়রানির শিকার হয়েছেন শুন্যেরচর গ্রামের প্রবাসী দিদারের স্ত্রী নাজমার ক্ষেত্রেও। তবে তার টাকার পরিমাণ ১ লক্ষ, অথচ ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে সাজিয়েছে ২ লক্ষ টাকা। যেমনটি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নাজমা বেগমের ভাই আকরাম হোসেন। তিনি বলেন হাতিয়া থানা হাজতে তার বোনকে দেখাতে গেলে, সে জানায় স্ট্যাম্পে দেওয়া স্বাক্ষরটি তার নয়।
এদিকে সুদ কারবারি মোক্তার হোসেন কর্তৃক হাতিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এর ১২০/২৩ সি আর নং এবং ২১০/২৩ নং সিআর মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঘটনাচিত্র প্রায় একই ধাঁচের এবং দু’টি মামলার স্বাক্ষীগণও প্রায় সব একই। যার সরেজমিন চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।
ফাঁকা স্ট্যাম্পে সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেনের সাজানো এই দুইটি মামলায় গতকাল দুপুরে দুই নারীকে স্থানীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর এলাকায় সুদ কারবারিদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য নিয়ে নানান সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেনের এলাকায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, মোক্তার হোসেন বহু আগে থেকে সুদের কারবার করে আসছে। সে প্রবাসে থাকাকালীন এবং বর্তমানে দেশে এসে গত চার বছর ধরে আরো ব্যাপক আকারে সুদের ব্যবসা করে চলছে। প্রতি ১ লাখ টাকায় মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা গুনতে হয় গ্রহীতাকে। পরে মূল টাকা তুলে দিতে হয়, চুক্তিকৃত সময়ের একটু এদিক সেদিক হলে- চলে নানান গাল-মন্দ, মান-অপমান আর মামলার খড়গ।
স্থানীয় আব্দুল হকের ছেলে মৎস্য ব্যবসায়ী খোকন জানান, গত চার মাস আগে সে মোক্তার হোসেন থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদের উপর নেয়। যার সুদ প্রতি মাসে চার হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। নচেৎ আচরণ খারাপ করে। নবীর হুজুর নামের এক ব্যক্তি জানায় মোক্তার হোসেন থেকে সে গত বছর ৫০ হাজার টাকা সুদের ওপর নেয়, যার প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়েছিলো ১ হাজার ৫০০ টাকা ; পরে মোক্তারের বেয়াদবির কারণে তার টাকা তাকে তুলে দেয়। স্থানীয় গুল্যাখালী গ্রামের ওসমান নামের এক দোকানদার জানায় পার্শ্ববর্তী নুর ইসলাম থেকে মোক্তার হোসেন কয়েকমাস আগে ১ লাখ টাকা সুদের উপর লাগায়। পরে তার আচার ব্যবহার খারাপ হওয়ায় ২-৩ মাস পর নুর ইসলাম টাকাগুলো তুলে দেয়। সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন তার প্রতিবেশী খলিয়ারগো আলাউদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের উপর লাগানো সহ এভাবে অসংখ্য দরিদ্র ও অভাবী মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চড়া সুদে যুগেরপর যুগ কারবার করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসব সুদ গ্রহীতারা।
এছাড়াও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে মোক্তার হোসেন উপজেলার রহমত বাজার এলাকার বাবুল নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী থেকে সুদের কারবার করলে এবং যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে অপারগ হলে মামলা দিয়ে বাবুলের ট্রলার সিজ করানোসহ বিভিন্নভাবে বাবুলকে নিঃস্ব করে ফেলে।
সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বুড়িচর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড গুল্যাখালী গ্রামের মৃত হাজী শামসুল হকের ছেলে। তার সহোদর ভাই আলী মিয়া জানান, সে কিভাবে টাকা লাগায় আমি জানিনা, তবে মানুষ ঠিকমতো টাকা দিয়া দিলেতো মামলা উঠে যায়।
এ বিষয়ে সুদ ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন থেকে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের মোবাইল ক্যামেরা সচল বুজে সে সদুত্তর না দিয়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করেন।
হাতিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জিসান আহমদ জানান, বিজ্ঞ আদালত এদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দাখিল করেছে আমরা ওয়ারেন্ট মূলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে জানা যায়, আজ ম্যাজিস্ট্রেট না থাকাই আগামীকাল সোমবার আসামিদেরকে কোর্টে হাজির করা হবে।