231 বার পঠিত
নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক নিরীহ ও অসহায় পরিবারের বসত বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আলাউদ্দিন মাঝি নামীয় এক প্রভাবশালী দখলদারের বিরুদ্ধে। বেড়ীর ধারে বসত ঘরের পিছন অংশের রাস্তা সংলগ্ন উম্মুক্ত ভিটে জমির সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকালে উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের চরফকিরা গ্রামের পুরান স্লুইস বাজারের পাশে। ওই গ্রামের ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মো. জসীম উদ্দিনের পিতা মৃত জয়নাল আবেদীন দীর্ঘ ৩৫-৪০ বছর ধরে সরকারি বেড়ী বাঁধের ধারে বসবাস করে আসছেন।
করোনাকালীন সময়ে জয়নাল আবেদীনের মৃত্যু হলে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। একমাত্র ছেলে জসীম উদ্দিন তার মা বোন সহ উক্ত বসত ভিটায় কোন রকমে দিনযাপন করে আসছে। পিতার মৃত্যুর ২ মাস পরে হঠাৎ আলাউদ্দিন মাঝি নামের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি জাল স্ট্যাম্প সৃজন করে আওয়াজ তুলতে থাকে যে, সে নাকি মৃত জয়নাল থেকে এটি ক্রয় করেছে। সে থেকে মাঝে মধ্যে আলাউদ্দিন মাঝি এই বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায় বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, তাদের ১১২১ নং হোল্ডিং এর অনুকূলে শুরু থেকে এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ করবর্ষে সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স পরিশোধ করে।
গত রবিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে পাশ্ববর্তী বুুড়িরচর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল কালামের ছেলে আলাউদ্দিন মাঝি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে জোরজবরদস্তি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বসতবাড়ীর জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে গাছ সব কেটে নিয়ে যায়। বাঁধা দিলে আলাউদ্দিন মাঝি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাছিমা বেগমকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে সে হাতেপায়ে জখম প্রাপ্ত হয় বলে জানান নাছিমা।
এর আগে উপজেলার সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিজান ভুক্তভোগী পরিবারের নারীপুরুষকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসে বলে জানান জসিম উদ্দিনের বিধবা মাতা জরিনা বেগম। এসআই মিজান বিষয়টি পরে অবশ্য অস্বীকার করেন।
এদিকে স্থানীয় মোজাম্মেল হোসেন নামের এক বয়স্ক ব্যক্তি জানান, মৃত জয়নাল আবেদীনের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এই বেড়িরকূলে বসবাস করে আসছে, কোনদিন শুনিনি তিনি এই জায়গা বিক্রি করেছেন। অপরিচিত একদল লোক এসে এই অসহায় পরিবারের উপর হামলা করে গাছপালা কেটে নিয়ে যায় বলেও জানান এই বয়স্ক ব্যক্তিটি। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মন্নান এবং আজমির নামের স্থানীয় এই ব্যক্তিরাও জানান, রবিবার সকালে একদল লোক এসে জসিম উদ্দিনের বাড়ীর গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। স্থানীয় মোজাম্মেলের ছেলে দিদার জানান, আলাউদ্দিন মাঝি অন্যায়ভাবে এই অসহায় পরিবারের উপর জুলুম করতেছে।
বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সংক্রান্তে মুঠোফোনে আলাউদ্দিন মাঝি’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, বড় বড় সালিশদার ব্যক্তিরা সালিশ করে আমার পক্ষে রায় দিয়েছে, সালিশি রোয়েদাদ-এ সাক্ষী আছে.. ; ওই পক্ষ আমার স্ট্যাম্প ভূয়া বললে বলুক..। তবে আলাউদ্দিন মাঝির সৃজন করা স্ট্যাম্পে উল্লেখিত সাক্ষী মহিউদ্দিন, মাইন উদ্দিন, আবুল কাশেম এবং দুলাল সহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কারো থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে, কেউ বলেন বেচা-বিক্রির কথা কখনো শুনিনি আবার কেউ বলেন মৃত জয়নাল আবেদীনের সাথে আলাউদ্দিন মাঝির ৫০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে বলে শুনেছেন কিন্তু তারা চাক্ষুষ দেখেননি।
বেড়িবাঁধের ধারে বসবাস করা জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের বিধিমালা সম্পর্কে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের জায়গা ক্রয়বিক্রয়ের কোনও সুযোগ নেই।
ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন উক্ত ঘটনায় থানা প্রশাসনের নিকট বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর সুবিচার চেয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সাথে বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে আলাপ করলে তিনি জানান, অভিযোগ পেয়েছি, উভয় পক্ষকে দু-একদিনের মধ্যে ডাকবো।