29 বার পঠিত
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইতিমধ্যে ১৬ বছর পার করে ফেলেছে। শুরু থেকেই শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও আবাসন সংকটসহ বহুমুখী জটিলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আসা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
গত বছরের আগস্টে ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসার পর নতুন করে গতি এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। গত সেপ্টেম্বরে নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়া অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সাম্প্রতিককালে নেওয়া পদক্ষেপসমূহ
এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম সংকট দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মামুদ ভবন ও একাডেমিক ভবন-২ কে ছয়তলায় রুপান্তরের উদ্যোগ।এ ক্ষেত্রে, ভবন দুটিতে আরও দুটি করে ফ্লোর সম্প্রসারণ করা হবে। এর পাশাপাশি, ভবন দুটির প্রতিটিতে দুটি করে মোট চারটি লিফট সংযোজন করা হবে। এই প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শেষে বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। এ ছাড়া, একাডেমিক ভবন-৪ এ চতুর্থ তলার উপর অর্ধেক ছাদের সাথে বাকি অংশ মিলিয়ে ৫ তলার কাজও স্বল্প সময়ের মধ্যে শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
অপর দিকে, শহীদ ফেলানী হলে প্রভোস্ট অফিস কাম রেসিডেন্স ভবনের দ্বিতীয় তলার ভিতরের ফিনিশিং কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলাবিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়াকেও তৃতীয় তলায় রুপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় মসজিদের দ্বিতীয় তলার কাজও শীঘ্রই শুরু করা হবে। প্রধান ফটক থেকে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার কাজও শুরুর কথা রয়েছে।
ছাত্রীদের কমন রুম একাডেমি ভবন-৩ ও ১ এর মাঝের জায়গায় ফাউন্ডেশন ঢালাইয়ের কাজও শীঘ্রই শুরু করা হবে। এরই মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেকানিক্যাল এন্ড ইন্সট্রুমেন্টেশন ল্যাবেরেটরি ভবনের সম্প্রসারণের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসের মধ্যে স্টেশনারী, লন্ড্রি ও সেলুনের দোকান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি, চালু করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য ফুডকোর্ট।
এ ছাড়া, নির্মাণাধীন ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ভবন ও ছাত্রী হলের কাজ পুনরায় শুরুর লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবে আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করছে বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই উদ্দেশ্যে আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগও হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবু সাঈদ গেট নির্মানের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ ছাড়া, নতুন হল ও অডিটোরিয়াম নির্মানের প্রস্তাবনাও ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপের বিষয়ে পাকিস্তানি হাইকমিশন, জার্মান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মিটিং করেছেন বেরোবি উপাচার্য। একইসঙ্গে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক সংকটের বিষয়েও ইউজিসি বরাবর আবেদন পেশ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফজলুল হক বলেন, গৃহীত পদক্ষেপগুলো অবশ্যই প্রশংসনীয় কিন্তু এগুলোর যথাসময়ে সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আরো কি কি মৌলিক প্রয়োজন রয়েছে সেগুলোর দিকেও মনোযোগী হতে হবে। প্রতিটি রুটে বাস বৃদ্ধিসহ ছেলে এবং মেয়েদের শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও কাজ করতে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সবুর হোসেন বলেন, নতুন প্রশাসন আসার পর যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। আমরা এ ধরনের আরও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে কর্তৃপক্ষকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখতে চাই। বিশেষত, নারীদের হলের পরিষেবা বৃদ্ধি এবং আরও আবাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করি। এছাড়া, আমাদের স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। স্থায়ী শহিদ মিনারও নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিবে বলে আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহত শিক্ষার্থীদের সমস্ত শিক্ষা ব্যায় মওকুফ ও বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য কাজ করছেন আমাদের ভিসি স্যার।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাগজও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছেন তিনি। আবু সাঈদ গেট নির্মাণের জন্য তিনি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শিক্ষক সংকটের বিষয়েও উপাচার্য মহোদয় ইউজিসি বরাবর আবেদন পেশ করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে আমরা নির্মাণাধীন নারীদের হলের কাজ শীঘ্রই সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। শ্রেণিকক্ষ সংকট মোকাবিলায় কবি হেয়াত মামুদ ভবন ও একাডেমিক ভবন-৪কে ছয় তলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি, ক্যাফেটেরিয়াকেও তিন তলায় রূপান্তরের পরিকল্পনা আমাদের আছে।
এ সময়, শিক্ষার্থীদের বাসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে রূপালী ব্যাংক একটি বাস কেনার অর্থ ইতিমধ্যে হস্তান্তর করেছে। পরবর্তী অর্থবছরে আরও বাস কেনার অর্থ তাঁরা দিবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।
উপাচার্য আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশকিছু বিভাগে এখনও শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে ইউজিসির কাছে আরও শিক্ষক নিয়োগের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী জানান, শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে জার্মানি, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাঁরা ইতিমধ্যে বেরোবিতে কয়েকবার ঘুরেও গেছেন। পাশাপাশি, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের ৩০০ শিক্ষার্থীকে পাকিস্তানে গবেষণার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে সকল শিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের বাইরে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার কোর্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। সার্বিকভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।