56 বার পঠিত
আজ শীতের সকালে ঘুম ভাঙতেই জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। রাস্তার ধারে গাছগুলো যেন সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাখির ডাক নেই, রোদের উষ্ণতাও নেই। শুধুই ঠাণ্ডা হাওয়া আর প্রকৃতির স্তব্ধতা।
দূরে রাস্তায় একজন মানুষকে দেখলাম। পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে সে ধীরে ধীরে হাঁটছে। হয়তো স্কুলে যাচ্ছে কোনো শিশু, কিংবা শ্রমজীবী কোনো মানুষ, যার কাজ শীতের বাধা মানে না। তার মাথায় একটা পুরোনো টুপি, হাতে ছেঁড়া একটা মাফলার। মনে হলো, শীতের এই কষ্ট সয়ে সে জীবনের যুদ্ধে এগিয়ে চলেছে।
আমাদের কাছে শীতের সকাল মানে আরামদায়ক বিছানায় একটু বেশি সময় কাটানো, গরম চা বা কফির কাপ হাতে নিয়ে জানালার বাইরে কুয়াশা দেখা। কিন্তু তাদের কাছে? যাদের জীবনের প্রতিটি দিন যুদ্ধের মতো, তাদের কাছে শীত মানে আরও কঠিন সংগ্রাম।
ভাবতে থাকি, আমরা তো নিজেদের আরামের জন্য অনেক কিছুই করি। কিন্তু কখনও কি ভেবেছি, এই ঠাণ্ডা হাওয়ার মধ্যে যারা কাজ করছে, তাদের জন্য একটু উষ্ণতার ব্যবস্থা করতে পারি কি না? যদি একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা চায়ের দোকানে একজনকে এক কাপ চা কিনে দিই, তার দিনটা হয়তো একটু ভালো হয়ে যাবে।
এই ভাবনা আমাকে এক পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিল। তখন আমি ছোট ছিলাম। একবার শীতকালে বাবা আমাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ দেখলাম, এক ভিক্ষুক রাস্তার ধারে বসে কাঁপছে। বাবা তখন আমার শীতের মাফলারটা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম। বাবা বলেছিলেন, “মানুষ মানুষের জন্য, এই কথাটাই মনে রাখিস।”
আজ এত বছর পর সেই স্মৃতিটা যেন আমাকে আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে। শীতের কষ্ট শুধু আমাদের অনুভব করলেই হবে না, অন্যদের অনুভূতিটাও বুঝতে হবে।
আমাদের ছোট ছোট কাজ হয়তো অন্যের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শীতের সকাল আমাদের শেখায় দানশীলতা, মানবতা আর অন্যের কষ্ট ভাগ করে নেওয়া। আসুন, শীতের এই মৌসুমে আমরা শুধু নিজেদের আরামের কথা না ভেবে, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।
শিক্ষার্থী : গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর