111 বার পঠিত
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ‘স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ (পিএস) এর জন্য মনোনীত হয়েছেন রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সালমা আক্তার মীম। তিনি ১ নং কাপ্তাই গার্ল ইন নৌ স্কাউট ইউনিট হতে কাপ্তাই জেলার নৌ অঞ্চল রোভার স্কাউট গ্রুপের সহচর স্তরের রোভার।
বাংলাদেশ স্কাউটস সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত স্কাউটদের তালিকায় ৭৭৪নং এ সালমা আক্তার মীম প্রেসিডেন্ট স্কাউট (পিএস) অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মালেক ও নাসিমা আক্তার দম্পতির দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সালমা আক্তার মীম দ্বিতীয়।
প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য মনোনীত হওয়ায় উৎফুল্ল সালমা আক্তার মীম বলেন, ‘আমি কাপ্তাই নেভিতে স্কাউটিং করি, কাব স্কাউট, স্কাউট, রোভার স্কাউট- এ তিনটি স্কাউটিংয়ের পর্যায়ে আমি রোভারিংয়ের সাথে যুক্ত হয়ে কাপ্তাই, উপজেলা, জেলা, অঞ্চল এবং জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার, লিখিত, মৌখিক, ব্যবহারিক মূল্যায়নে অংশ নিয়েছি। সবশেষ ঢাকা গাজীপুরে জাতীয় পর্যায়ে ক্যাম্প অংশগ্রহণ করে প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছি। আমার শিক্ষা জীবনে এটি অনেক বড় অর্জন। বলতে গেলে এটি আমার জীবনকে একেবারে বদলে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্কাউটরা আত্মপ্রত্যয়ী, পরোপকারী, দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট। নেতৃত্বের সবটুকু গুণাবলী স্কাউটদের মধ্যে আছে। তবে পড়ালেখার ক্ষতি করে কোনভাবেই স্কাউটিং করা যাবে না। রোভার স্কাউটদের প্রণীত প্রোগ্রামগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই সফলতা ধরা দেবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আমরা যারা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি তাদেরকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট শাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দিবেন বলে জানতে পেরেছি।’
সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ মাস্টার বলেন, এই ইউনিয়নের আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেক কৃতি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কৃতিত্বের সাথে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে, এতে একজন স্বর্গ পেয়ে স্বর্গীয় মানুষের যে অনুভূতি হবে, ঠিক তদ্রূপ। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মীমের আগে সরফভাটা ইতিহাসে স্কাউটে কেউ এ কৃতিত্ব অর্জন করতে পারিনি সেই প্রথম। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন, ভবিষ্যৎ জীবনে আরো বড় বড় অ্যাওয়ার্ডের অধিকারিণী হোক এবং তার জীবন সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত হোক এই কামনাই করি।
সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মীম ইউনিয়নকে গৌরবন্নিত করেছে। এই প্রথম সরফভাটায় স্কাউটের রাষ্ট্রপতির পদক পেয়েছে, পরিষদের পক্ষ থেকে প্রাণডালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি খুব শীঘ্রই তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হবে।
সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, মীম আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী, সে ২০২২ সালের আমাদের স্কুলের থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। সম্প্রীতি স্কাউটিংয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার এই কৃতিত্বে গর্বিত, তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ও সাফল্যমন্ডিত হোক।
মীমের মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় পরিবারের দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও মেয়ের মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। আমার মেয়ের ১১ বছর সাধনা যখন শুনলাম মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমার মেয়েকে অ্যাওয়ার্ড দিবেন তখন ওই মুহূর্তে গর্ভে কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমার গর্বের ধন মীম আজ যে কৃতিত্ব অর্জন করেছে তার জন্য আমাকে বিভিন্ন জন ফোন করে শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ জানাচ্ছে। একজন মায়ের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, স্কাউট একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই স্কাউট আন্দোলন চালু আছে। বাংলাদেশে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। দেশের প্রায় সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই এর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কাউটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে স্কাউটিংয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাওয়ার্ড ভূষিত করা হচ্ছে।