149 বার পঠিত
রংপুর প্রতিনিধি>রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩% নারীর অন্তর্ভুক্তসহ ৮ দফা দাবিতে রংপুরে অপরাজিতা ও নারী উন্নয়ন ফোরামের মানববন্ধন-সংবাদ সম্মেলন।গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (সংশোধন-২০০৯) রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩% নারীর অন্তভর্ূক্তি এবং নতুন সময়সীমা বর্ধিতসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে অপরাজিতা ও নারী উন্নয়ন ফোরাম।
এরই ধারাবাহিকতায় ১লা নভেম্বর (সোমবার) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে দাবি আদায়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বিকেলে রংপুর মহানগরীর গুপ্তপাড়াস্থ ক্লাস্টার অফিসে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি পারভীন আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (সংশোধন-২০০৯) অনুচ্ছেদ ৯০বি-তে বলেছে সকল রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে ৩৩% নারীর প্রতিনিধিত্ব, ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল কমিটিতে নারীদের অর্ন্তভুক্ত করছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অপ্রতুল।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পাটিসহ অন্যান্য দলগুলোর কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় কমিটিতে নারীর অর্ন্তভূক্তির অগ্রগতি খুব একটা ভালো নয়। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (সংশোধন-২০০৯), ৩৩% নারীর প্রতিনিধিত্ব-২০২০ এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ থেকে দল নিবন্ধনের অধ্যায়টি তুলে দিয়ে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০থ নামে নতুন আইন (খসড়া) প্রণয়ন করেছে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। খসড়া আইনে রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ে ৩৩% নারীর অন্র্Íভূক্তি করার কথা বলা আছে এবং সময়সীমা বর্ধিত করার এক প্রস্তাব আছে ২০৩০ সালে।
বাংলাদেশের মোট ভোটারের প্রায় ৫০% নারী ভোটার। নারীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে নারীরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই কোন না কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে নারীদের আবার পিছিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা দেখা যাচ্ছে, যেখানে নারীরা সরাসরি ভোটে অংশ নেওয়ার সুয়োগ হয়েছে, সেখানে নারীরা ভালো করছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কোঅপারেশন-এসডিসিথর অর্থায়নে এবং হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশনের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রিপ ট্রাস্ট, খান ফাউন্ডেশন, রূপান্তর ও ডেমক্রেসিওয়াচ বাংলাদেশের ৬টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৬২টি উপজেলার মোট ৫থশ ৪১টি ইউনিয়নে ‘‘অপরাজিতা: নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নথথ নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাজিতারা স্থানীয় শাসন প্রক্রিয়ায় নারীদের সমান অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব এবং নেতৃত্ব বিকাশে অবদান রাখা।
অপরাজিতাদের বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাঠামোতে যেমন, ইউনিয়নের স্থায়ী কমিটি, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থানীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণের অন্র্Íভূক্তি করা। অপরাজিতাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে, ইউনিয়ন পরিষদের কাজ, দায়িত্ব-কর্তব্য, সুশাসন, গণতন্ত্র, অধিকার, মানবাধিকার, নেতৃত্ব বিকাশসহ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। নারী উন্নয়ন ফোরামের সদস্যরা রাজনৈতিক দলের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩৩% নারীর অন্র্Íভুক্তি এবং সময়সীমা বৃদ্ধি করার লক্ষে গত বছরের ৫ নভেম্বর ২০২০ সালে ১৬টি জেলাধীন ৬২টি উপজেলার মানববন্ধন, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সকল কার্যক্রমের ফলে প্রকল্পভূক্ত এলাকাতে ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা কমিটি বিশেষ করে নারী সংশ্লিষ্ট যেমন মহিলা লীগ, মহিলা যুব লীগ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এবং জাতীয় মহিলা পাটি কমিটিগুলোতে অপরাজিতাদের অন্র্Íভূক্তি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের মে-জুলাই অপরাজিতা প্রকল্পভুক্ত এলাকায় রাজনৈতিক দলের জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন (মূল কমিটির) উপর একটি স্ট্যাডি/গবেষনা করা হয়।
গবেষনায় দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মূল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি তুলে ধরে বলা হয়, এখন শুধু একটাই দাবি আগামী সম্মেলনে রাজনৈতিক দলের জাতীয় এবং স্থানীয় কমিটিতে নারীর অন্র্Íভূক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে।
আগামী সময়সীমার মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ (৩৩%) নারীদেরকে অন্তর্ভূক্ত করতে পরলেই প্রকৃতভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী ফিরোজ কবীর যুগল, কর্মসূচি সমন্বয়কারী রেজাউল করিম, নীলফামারী জেলা সমন্বয়কারী কামাল হোসেন শাহ, গঙ্গাচড়া কো-অর্ডিনেটর আব্দুল খালেক প্রমুখ।