25 বার পঠিত
লক্ষ্মীপুর জেলার মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নদীর পানি সরে গিয়ে জেগে উঠেছে পলিসমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ চর। এই চরগুলোতে কৃষকেরা বুনছেন রঙিন স্বপ্ন। তেমনই এক চর হলো চর মেঘা, যা কৃষিতে বিপ্লবের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
চর মেঘা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট থেকে পশ্চিমে নদীর মাঝখানে অবস্থিত। একসময় পরিত্যক্ত ও গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত এই চরটি এখন সোনালি ফসলে সমৃদ্ধ। গত দুই দশক ধরে স্থানীয় কৃষকেরা এই চরে উৎপাদন করছেন ধান, সয়াবিন, শসা, করলাসহ নানা ধরনের ফসল। বছরের ছয় মাস কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা ব্যস্ত থাকেন চাষাবাদ নিয়ে।
চরের উর্বর পলিমাটিতে উৎপাদিত প্রায় ৯০ শতাংশ সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এটি স্থানীয়দের জন্য যেমন কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগ থেকে তারা কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পান না। এমনকি স্থানীয় কৃষি অফিস থেকেও তাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। ফসল উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত তারা নিজেদের উদ্যোগে কাজ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার সমস্যায় তারা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
একজন স্থানীয় কৃষক জানান, “চরে ধান, সয়াবিন, শসা, করলা, লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গাসহ নানা জাতের সবজি চাষ করি। চাষাবাদ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, অথচ কোনো ঋণসুবিধা পাই না। গেল মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারি সহযোগিতা দরকার।”
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, চরের প্রায় ১২,৪০২ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। চরের কৃষিকে আরো গতিশীল করতে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী প্লট ও মাঠ দিবস আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সরিষা, ভুট্টা, বাদাম ও তিলের মতো সম্ভাবনাময় ফসল চাষে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চরের উর্বর মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তবে কৃষি বিভাগ ও সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে এই চরে কৃষিতে আরও বড় বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। স্থানীয় কৃষকেরাও আশা করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনায় চরের কৃষি হবে আরও সমৃদ্ধ, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।