191 বার পঠিত
মিরপুরের রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মিরপুর কমার্স কলেজের পাশে ঝিলপাড় বস্তির বিপরীতে এ ঘটনা ঘটে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর ঘটনার পরই বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের বিষয়টি উঠে আসে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুতের চোরাই লাইন দিয়ে চলে ঝিলপাড় বস্তি। মাদকেরও স্পট ওই বস্তি। কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও স্থানীয় নেতাদের প্রভাবে উচ্ছেদ করা যায় নি।এলাকাবাসী বলছেন, বস্তিতে বিদ্যুৎ দিতে দেয়ালে সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে ভিতরে দিয়ে তার নেওয়া হয়েছে। তারের ভিতরে লিকেজ আছে। আর সেই লিকেজের সঙ্গে নিচে যেই রডের অংশ বের হয়ে আছে সেটা কোনভাবে সংযোগ হয়ে রডটা বিদ্যুতায়িত ছিলো। যে কারণে সেই জায়গাটাতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বিদ্যুতায়িত হয়। এই চোরাই লাইন ড্রেনের ভিতর দিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও লাইন বিচ্ছিন্ন করেনি ডেসকো ।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মিরপুর ২ নম্বর ঝিলপাড় বস্তি ও কমার্স কলেজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা এবং পাশের একটি ভবনের পাশে দুটি খুঁটি থেকে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। খুঁটি থেকে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দেওয়ার পর বিল্ডিংয়ের দেয়ালে প্লাস্টার করে দেয়া। আর লাইনটি ড্রেনের ভেতর দিয়ে নিয়ে ঝিলপাড়ের বস্তিতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে।এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা চার জনের মৃত্যুর ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানান বস্তিবাসীরা।এছাড়াও দুর্ঘটনার সঙ্গে মিরপুর ২ নম্বরে ডুইপ আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ২ নম্বর লেনের একাধিক ট্রান্সফরমার থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে জানান এলাকাবাসী।স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বস্তিবাসীর কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অবৈধ এসব বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে সবাই অবগত, কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলে না।
পুলিশ কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগের লোক এলে শুধু অভিযানে সংযোগগুলো বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। তারপর আর কিছুই দেখা হয় না। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লাইনগুলো আবার জোড়া লেগে যায়। এসব বিষয়ে কেউ কথা বলতে গেলে তাদেরও নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ করেন বস্তিবাসীরা।প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে ঝিলপাড় বস্তির পাশেই আত্মীয়ের বাড়িতে রাতের খাবার খেতে যাওয়ার সময় পরিবারের চার সদস্য জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, সাত বছর বয়সী মেয়ে লিনার মৃত্যু হয়। পানিতে পড়ে গিয়েও অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় তাদের আরেক সন্তান ছয় মাস বয়সী হোসাইন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে মারা যান রিকশাচালক অনিক।এই ঘটনায় বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত অনিকের বাবা। মামলায় অভিযুক্তদের বিষয়ে কারও কোনও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, তাদের পরিদর্শন টিম কোনও এলটি/এইচটি লাইন ছেঁড়া বা ছেঁড়া বিদ্যুতের তার পায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, গ্রাহকের ইন্টারনাল সার্ভিসের ওয়ারিং ত্রুটির কারণে বৈদ্যুতিক এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।