144 বার পঠিত
বাকৃবি প্রতিনিধি>
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা এবং ছাত্রীদের দলে ভেড়ানো নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের দুটি গ্রুপের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও রাস্তা অবরোধের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত গ্রুপটি সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনাকে মিথ্যাচার ও সাজানো নাটক মঞ্চায়নের অভিযোগ করেছেন। রবিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা এ অভিযোগটি করেন। একইসাথে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা তায়েফুর রহমান রিয়াদ, রাশেদ খান মিলন, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, হুমায়ন আহমেদ শোভন, লিমন খান, ইমরান সিদ্দিকী, তারিক জামান জয়, ইশরাত জাহান রিজা, জান্নাতুল নাঈম ঐশী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা লিখিত অভিযোগ বলেন, ‘বেগম রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক তানজিনা শিকদার, তানজিলা মোবাশ্বেরা স্বর্ণালী, ছাত্রলীগের কর্মী আইরিন আকতার, ইশরাত জাহান তাজিন আমাদের সমর্থন করা ছাত্রীদের বাধা প্রদান করে ও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে যাতে তারা আমাদের সাথে প্রোগাম করতে না পারে।
পরবর্তীতে মিটিং করে জুনিয়র ছাত্রীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন গর্হিত কাজ করেছে যা তাঁদের পুরোনো স্বভাব। উস্কানি না পেলে আমাদের ছোট বোনেরা কোনদিনও রাস্তায় নেমে এমন কাজ করতো না। জোরপূর্বক ছাত্রীদের রাস্তায় নিয়ে গিয়ে এমন কাজ করেছে তার অভিযোগও ওইসব মেয়েরা আমাদের জানিয়েছে।
আসলে জোর করে এভাবে এমন অন্যায় কাজ করানোর অধিকার কারো নেই। এমনকি ঘটনার দিন রাতে আন্দোলনে না যাওয়া ছাত্রীদের রুম থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেয় ও ছাত্রীদের হলের গণরুমে পাঠিয়ে দিতে চায়।’
সংবাদ সম্মলনে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী উপস্থিত নেতারা বলেন, ‘যেসময় ঘটনাটি হয়েছে সেসময় আমরা সবাই একসাথে ছিলাম। এমন কোন কথা বা কাজ তায়েফুর রহমান রিয়াদ ভাই বলেননি যা তারা অভিযোগ করেছে। ভাই শুধু বলেছেন, যারা আমাদের প্রোগামে আসতে চায় তাদের বাধা দেওয়ার কোন অধিকার তাঁদের নেই।
এই কথা ছাড়া যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা পুরোটাই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সাজানা নাটক। আর এ সাজানো নাটকে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা ইমতিয়াজ আবির, আবু রায়হান মিথুন, সজীব চন্দ্র সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।’
ইশরাত জাহান রিজা বলেন, ‘খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ ভাইয়ের নামে এককভাবে নারীদের শ্লীলতাহানি ও অবমাননার যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের প্রায় অর্ধশতাধিক নারী কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এমনকি এখানে পদপ্রত্যাশী অনেক ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছিলেন তারাও প্রত্যক্ষ সাক্ষী যে ওখানে এমন ধরনের কোন কিছু হয়নি।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, তদন্ত সাপেক্ষে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য দোষীদের কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের আন্দোলনে যাওয়া এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের জোর করে রাস্তায় নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি যদি আন্দোলনে না যাই তবে অনেক সমস্যা হবে বলে আমাদের হুমকি দেয়, পরে বাধ্য হয়ে সেখানে যাই।
আমি পরীক্ষার কথা বললেও, তারা বলে তোমাদের পরীক্ষা পিছানো হবে স্যারদের সাথে কথা বলে। আর আমাদের আন্দোলনে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাজানো বাক্য স্লোগান দিতে বলা হয়। আমরা ভয়ে বাধ্য হয়ে সেসব বলি, আসলে আমাদের কিছু করার ছিল না।
আমরা নিজেও জানিনা কার বিরুদ্ধে, কিসের বিরুদ্ধে এসব আন্দোলন করছি। আর ভিসির বাড়ির সামনে রাস্তা অবরোধের সময় পথচারীদের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে। এমনকি প্রক্টর, ভিসি, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা স্যারকেও অবরোধের সময় গালি দিতে বলে অামাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেষমোড়ের এক পথচারী বলেন, ‘মাঝে মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। এসময় আমরা সে পথ দিতে যেতে চাইলে তারা আমাদের গায়েও হাত তোলে, গালিগালাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় এ পথটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের অনেক সমস্যা হয়।
অনেক সময় রোগীর গাড়িটিকেও তারা যেতে দেননা। এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের করা ঠিক না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, শিক্ষার্থীরা যেন ভবিষ্যতে আমাদেও চলার পথটি আর অবরোধ না করেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
বেগম রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক তানজিনা শিকদার বলেন, ‘আমি কাউকে জোর করে নিয়ে যাইনি এমননকি কারো বিরুদ্ধে সাজানো স্লোগান দিতেও বলেনি। তবে ঘটনাস্থলে যারা ছিল তারা সবাই নিজে থেকেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। পথচারীদের সাথে যে খারাপ আচরণ করা হয়েছে তাতে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আবির, আবু রায়হান মিথুন ও সজীব চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ইন্ধনের অভিযোগটি সঠিক নয়। তায়েফুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে আমরা কোন অভিযোগ করিনি। আমারা রাজনৈতিক সহকর্মী হিসাবে ছাত্রীদের রাস্তা অবরোধের সময় পাশে ছিলাম ও পরোক্ষভাবে তাদের সমর্থন দিয়েছি। ’
ঘটনাটি যখন সংঘটিত হয় ঠিক ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম গাড়ি যোগে ওই রাস্তাটি দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি দেখলাম কিছু শিক্ষার্থী পূবালী ব্যাংকের সামনে জটলা করেছে। ওদের ডেকে বললাম কি হয়েছে, তেমন কিছু হয়নি বলে জানায় তারা। আর আমার নিজেরও এটা দেখে তেমন কিছু মনে হয়নি। তারা আমার গাড়িকে সাইড দিলে আমি চলে যাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারূপ করছে। দু পক্ষ থেকেই আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেুতু পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সিসিটিভির আওয়াভুক্ত সিসিটিভি দেখলেই আমারা সব বুঝতে পারবো। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তদন্ত সাপেক্ষে তারা সত্যিকার অর্থে দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।