124 বার পঠিত
{১} চিনির দামে লাগাম টানতে শুল্ক ৫০ শতাংশ প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারপরও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী।
মাত্র দুই সপ্তাহ ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন কার স্বার্থে শুল্ক সুবিধা অর্ধেক কমানো হলো?
[২] গত ১ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হবে তিন হাজার টাকা।
[৩] আগে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হতো তিন হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ছিল ছয় হাজার টাকা। অর্থাৎ, উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চিনির আমদানি শুল্ক ছাড়ের এ সুবিধা পাওয়া যাবে।
[৪] এছাড়া আমদানি শুল্কের পাশাপাশি চিনিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে ৩০ শতাংশ। এছাড়া আমদানিকারকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। সেই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় ২ শতাংশ। [৫] যে সময়ে শুল্কে অর্ধেক ছাড় দেয়া হয় সেই সময়ে (অর্থ্যাৎ নভেম্বরে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। দুই সপ্তাহ ব্যবধানে সেই চিনি কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। বাজারে এখন চিনির কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনির দাম রাখা হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকা।
[৬] সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এক বছর আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১০৫-১১৫ টাকা। [৭] শুল্ক কমানোর পর আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির সামগ্রিক আমদানি ব্যয় কমেছে। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত ১৫ দিনে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহে চিনির দাম প্রতি মণে বেড়েছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
[৮] রাজধানীর মালিবাগ বাজারের প্রায় ১২টি মুদি দোকানে চিনি বিক্রি হয়। সকালে মাত্র তিনটি দোকানে চিনি পাওয়া যায়। তাদের কেউ বিক্রি করছেন ১৪৫ টাকা আবার কেউ বিক্রি করছেন ১৫০ টাকার মধ্যে। সেখানে গাজী স্টোরে খোলা চিনি ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দোকানি এনামুলের কাছে শুল্ক ছাড়ের পরে দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলেতিনি বলেন, কোন জায়গায় শুল্ক কমেছে? আমরা তো কিছু জানি না। আমরা চিনি পাচ্ছি না, এটাই জানি। আর দাম বাড়ছে বলে শুধু রেগুলার কাস্টমারের জন্য চিনি রাখছি। পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনির দাম প্রায় ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
[৯] চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার প্রতি মণ চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কিলোগ্রাম) ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
[১০] পাইকারি বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। দুই সপ্তাহে খোলা চিনির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫ টাকা।
[১১] খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সরকার শুল্ককর কমালেও মিলাররা চাহিদামাফিক সরবরাহ না দেওয়ায় বাজারে চিনির দাম কমছে না। মিলার ও ডিও বিক্রেতারা কারসাজির মাধ্যমে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
[১২] খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বাজারে চিনির বিক্রি কম। তারপরেও দাম বাড়ছে। কারণ মিলার ও প্রথম হাতবদলকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে চিনির বাজার বন্দি। খাতুনগঞ্জের যারা ডিও বিক্রি করেন তাদের সঙ্গে মিলারদের যোগসাজশ রয়েছে। সরকার শুল্ক কমালেও এর প্রভাব পাইকারি বাজারে পড়েনি। উল্টো দুই সপ্তাহ ধরে চিনির দাম বেড়েছে। তবে বিক্রি কম।
[১৩] তিনি বলেন, মিলারদের ১০ শতাংশ শুল্ক কমানোর দাবি ছিল। কিন্তু সরকার এক দশমিক পাঁচ শতাংশ কমিয়েছে। মূলত শুল্ক কমালেও মিলাররা চিনি সরবরাহ দিচ্ছেন না। সরবরাহ না দিলে বাজারে দাম কমার তো কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে সরকার শুল্ক কমালেও গ্রাহক পর্যায়ে এর সুফল মিলছে না।
[১৪] এদিকে পাইকারি বাজারের মতো খুচরা পর্যায়েও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণহীন। চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান এলাকার মুদি দোকানি আবসার উদ্দিন বলেন, আমরা মঙ্গলবার ১৩৫ টাকা কেজিতে চিনি কিনে এনেছি। এখানে খুচরা ভোক্তাদের কাছে ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। সরকার শুল্ক কমানোর কথা বলেছেন, কিন্তু বাজারে উল্টো দাম বেড়েছে।
[১৫] জানা যায়, দেশে বছরে কম বেশি ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টনের মতো। গত বছর থেকে তা ২৫ হাজার টনে ঠেকেছে। অবশিষ্ট চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।
[১৬] দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর আমদানি করতে হয় প্রায় ৯৬ শতাংশের বেশি চিনি। ব্যক্তিখাতের পাঁচ শিল্প গ্রুপ সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিল অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পরে নিজেদের মিলে পরিশোধন করে বাজারজাত করে। সিটি ও মেঘনা গ্রুপ জায়ান্ট আমদানিকারক। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের আলোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলম।