139 বার পঠিত
ঝালকাঠির বিষখালী নদীর আকস্মিক ভাঙনে গত বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় “দেউরী সাইক্লোন শেল্টার”। ঐ দুঘটনায় ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপাপড়া স্কুল ছাত্রের সন্ধান মেলেনি আজো।
সন্তানের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চেয়ে বছর পাড় করলো নিখোঁজ নেয়ামত উল্লাহর পরিবার।ঘটনার দিন ২০২১ সালের ২৪ আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুর সারে ১২টায় ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী সাইক্লোন সেল্টারের পাশেই একটি আধাপাকা মসজিদ বিষখালী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
তখন তিনতলা সাইক্লোন শেল্টারের নীচ তলায় দাড়িয়ে মোবাইল ফোনদিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে নদীর ভাঙন দেখাতে থাকে এসএসসি পরিক্ষার্থী মো. নেয়ামত উল্লাহ।
মুহুর্তেই সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এল আকৃতির তিনতলা ভবনটির একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
আর ঐ ভবনের দুটি ছাদের নীচে চাপা পড়ে নদীতে তলিয়ে যায় একই ইউনিয়নের আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. নেয়ামত উল্লাহ। ঘটনার আজ এক বছর পাড় হলেও নির্নয় করা যায়নি ধ্বংসস্তূপের কোথায় আছে নেয়ামতের দেহ।
সস্তান হারা মা-বাবা আজো নেয়ামতের সন্ধানে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের ধারনা সন্তানের পড়নের জামা প্যান্ট হয়তো একদিন ভেসে উঠবে। বিষখালীর তীরে যখনই যায় তখনই অপলক দৃষ্টিতে পানির দিকে তাকিয়ে থাকে নেয়ামতের মা।
তার ভাষ্য পুরো নদীটাই তার সন্তানের কবর। আর তার বাবার বয়স ৬২বছর। আগে কৃষি কাজ করলেও এখন বয়সের কারনে কাজ করতে পরেননা। বাড়ীতেই থাকেন সবসময়।
নেয়ামতের বাবা আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য সবাই দোয়া করবেন, তার মৃত্যুটি যেনো শহীদি মৃত্য হিসেবে আল্লাহ কবুল করে নেয়।
নেয়ামতের ভাই মো.ফায়জুল্লাহ শামীম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মত এদেশে আর কারো মৃত্যু যেনো না হয়, সেজন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।
সরকার যেনো ভবন নির্মানের সময় স্থান নির্ধারন ও ভবনের গুনগত মানের দিকে নজর দেন। দেউরী সাইক্লোন শেল্টারের ভবন নির্মানের সময় স্থান নির্বাচন ভুল ছিলো।
যার খেসারত আজ আমরা দিয়েছি।
বরিশাল নৌ-ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলটি তিনটি নদীর মোহনায় হওয়াতে সেখানে অতিমাত্রায় শ্রোত বইছিলো।
আর যেখানে ভবনটি নিমজ্জিত হয়েছে সেই জায়গাটিতে পানির নাব্যতা ছিলো প্রায় ৬০ ফুট।পানির নীচে ভাঙা ভবনের দুটি ছাদ একত্র হয়েছিলো। আর তাই তখন উদ্ধার অভিযানে আমাদের ডুবুরিদের বেশ বেগ পোহাতে হয়েছিলো।
তিনতলা ভবনের রড ও কংক্রীটের ধ্বংসস্তুপে আহত হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো ডুবুরী দলের বিল্লাল নামের এক সদস্যের। শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ কিশোরের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতক্ষদর্শী কে.এম খায়রুল ইসলাম দৈনিক দেশেরকথাকে বলেন, ‘দুপুর সারে ১২ টায় বিষখালীর ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে যায় দেউরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ও একটি আধাপাকা মসজিদ।
এর আগে ঐদিন সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়টির পশ্চিম অংশে থাকা একটি সেইফটি ট্যংকি নদীতে তলিয়ে যায়।তার পরেই শিক্ষকরা বিদ্যালয় ভবনের দ্বোতলায় থাকা মালামাল সড়িয়ে নিচ্ছিলো।
তখন ভবনের নিচ তলায় ভাঙনের দৃশ্য ভিডিও করতে ছিল অনেকেই। ভবনটি যখন দেবে যায় তখন সবাই দৌড়ে নিরাপদে সরে যেতে পারলেও ছাদের নীচে চাপা পরে নদীতে তলিয়ে যায় নেয়ামত নামের ঐ শিক্ষার্থী।’
স্থানীয়রা জানায়, নির্মানের সময় ঝুঁকিপূর্নভাবে বিষখালির ভাঙনের মুখে ছিল ভবনটি। বেজমেন্টে মাটি সরে যাওয়ায় এটি এখন শুধু মাত্র পিলারের উপর দাঁড়ি আছে। ভবনের বাকি অংশ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।