123 বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। সফর শুরুর দিন প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে ঢাকা-প্যারিসের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আসতে পারে নতুন দিকনির্দেশনা। সেই লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর ঢাকা-প্যারিসের মধ্যে হতে যাওয়া শীর্ষ বৈঠকে সামনের দিনগুলোয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আসতে পারে নতুন দিকনির্দেশনা। ব্রেক্সিট পরবর্তী ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে নিতে আগ্রহী ঢাকা। সেই লক্ষ্যে বেশকিছু ইস্যু আলোচনার টেবিলে রাখবে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু ইস্যু, কানেক্টিভিটি; ঢাকা-প্যারিস সরাসরি ফ্লাইট, ও রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে মূল ফোকাসে। বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্রান্সের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এ সফর খুব গুরুত্ব বহন করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সামনের দিনগুলোয় দুই দেশের রূপরেখা নিয়ে থাকতে পারে নতুন দিকনির্দেশনা। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সংস্থার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে। এ সফরে বেশকিছু চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ইউনেসকো সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী ইউনেসকো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার হস্তান্তর করবেন।
গত ৩০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে। ড. মোমেন আরও বলেছিলেন, ফ্রান্সের সঙ্গে আমরা বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি। ফ্রান্সের সঙ্গে এখনও আমাদের সরাসরি ফ্লাইট নেই, এটা নিয়ে আমরা আলাপ করব। এছাড়াও একাধিক ইস্যু আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্সের সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে সেদিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, প্যারিসের এনগেজমেন্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীকে তিনটি স্থানে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
প্যারিসে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে: পাঁচ দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে পৌঁছানোর পর প্রথম কর্মসূচি শুরু হয় প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পাশাপাশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জঁ কাসতেক্সের সঙ্গে বৈঠক করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ ইভস লো দ্রিখাঁ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
আজ বুধবার ফরাসি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ফ্রান্স সফরের সময় দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেডেফের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে। এর পাশাপাশি এয়ারবাস ও থ্যালাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। আগামী শুক্রবার ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে অংশগ্রহণের জন্য ইউনেসকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরবেন।
ইউনেসকোয় ‘বঙ্গবন্ধু’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের প্রস্তাব জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ২১০তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্যারিসে ইউনেসকোর সদর দফতরে ‘ইউনেসকো : বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্যা ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি বিজয়ী ব্যক্তি/সংস্থাকে দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিয়ে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
৩ জায়গায় গার্ড অব অনার পাবেন প্রধানমন্ত্রী: তিনটি স্থানে পৃথকভাবে প্যারিসের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে গার্ড অব অনার। প্যারিসে পৌঁছানোর পর শেখ হাসিনাকে দ্য গল বিমানবন্দরে দেওয়া হবে আর্মস স্যালুট। এরপর দ্বিতীয়বার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে গেলে দেওয়া হবে আর্মস স্যালুট। সবশেষ যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মনুমেন্টে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীকে।