45 বার পঠিত
সদরপুর প্রতিনিধিঃ
আবহমান গ্রাম বাংলায় খেজুরের রস আহরণের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। এবছর পুরোপুরি শীত ও কুয়াশা আসার আগেই ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় অগ্রহায়ণ থেকেই খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা।
তাদের তৈরি ভেজালমুক্ত ও সুস্বাদু গুড় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও। মান ঠিক রাখতে গাছি ও তরুণ উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন এ উপজেলার গাছিরা। গাছ থেকে নামিয়ে আনেন রস ভর্তি হাঁড়ি। এরপর তা নিয়ে ছুটেন চুলার কাছে। টিনের বড় পাত্রে রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে শুরু হয় গুড় তৈরির প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে এ কর্মযজ্ঞ। এই উপজেলা এ বছর প্রায় দুই হাজার খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন তারা। শীত মৌসুমে রস থেকে গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার গাছিরা।
ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের জন্য সুক্ষাতি রয়েছে দীর্ঘদিন। এই অঞ্চলে শীত মৌসুমে খেজুরের রস ও খেজুরের ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়ের বিভিন্ন প্রকার পিঠা পুলি খাওয়ার ধুম পরে যায়। এ ছাড়াও শীতের দিনে মুড়ির সাথে খেজুর রস খাওয়ার আলাদা স্বাদ তো আছেই।
গাছিরা বলেন, উৎপাদিত গুড় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছেও বিক্রি করা হয়। ফরিদপুরের খেজুরের গুড় ও পাটালির খ্যাতি দেশজুড়ে। এখানকার গুড় কিনতে ভিড় করেন অন্য এলাকার মানুষও। এবছর প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ৬শ টাকা দরে।
স্থানীয় গাছি দেলোয়ার খান বলেন এই যুগে নির্ভেজাল খেজুর গুড় পাওয়া কঠিন। কারন প্রতি কেজি গুড় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে ক্রেতারা আগ্রহী নয়, তারা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরেই কিনতে চায়। তাই অনেক গাছিরা ইচ্ছা করেই ভ্যাজাল গুড় তৈরীতে আগ্রহী হচ্ছেন।
ক্রেতারা বলেন, ভেজালমুক্ত রস ও গুড় নেয়ার জন্য গাছি ও উৎপাদনকারীদের কাছে ছুটে আসা। আমরা ভালো মানের গুড় পেলে দামের কথা চিন্তা করি না।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন করে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। গুড়ের মান যাতে ঠিক থাকে তাই এ বিষয়ে তাদের সচেতন করা হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ফরিদপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখের বেশি খেজুর গাছ রয়েছে।