50 বার পঠিত
অবশেষে প্রায় ৪৩ মাস পর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।
জেল গেটে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের জামিন আদেশ এবং আদালতের জামিন পরোয়ানা পাঠানোর পরেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি তিনদিন ধরে। এ বিষয়ে আমি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রহণ করেনি। পরে ডাকযোগে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। সেখানে বাবুল আক্তারকে বেআইনি আটক করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেছি। একইসাথে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাও বলেছি। কিন্তু উত্তর পাইনি।
কফিল উদ্দিন বলেন, আইনের ধারা অনুযায়ী, প্রতিটি ঘণ্টা হিসেবে বেআইনিভাবে আটক করে রাখার শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। এছাড়াও আদালতের আদেশ অমান্য করে কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা করছে। আদালতের মুক্তি পরোয়ানা পেয়েও কার হুকুমে কারা কর্তৃপক্ষ বন্দি করে রেখেছে তা একমাত্র তারাই জানেন।
গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বাবুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার বাবুলের জামিননামা স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তাঁর শ্বশুর ও মামলার বাদী মোশাররফ হোসেন। শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হলেও আদেশের তারিখ পিছিয়ে আবার বুধবার জন্য রাখা হয়।
এর আগে, ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার। ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন জামিন নামঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একইদিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই।
তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।