71 বার পঠিত
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে গেছে। গত চার দিন থেকে তারা সবাই পলাতক থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পৌর এলাকার নাগরিক সেবা কার্যক্রম।
তবে সচিব জানান, মেয়র-কাউন্সিলরদের উপস্থিতির ডকুমেন্টের জন্য হাজিরা খাতা নেই। কারা পৌরসভায় আসলো আর কারা আসলো না, অতোটা খেয়াল করার সুযোগও পাই না। তবে তারা কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলেও নাগরিক সেবা খুব বেশি বিঘিœত হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২১ জুন ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত আলী তালুকদার। সেই সাথে ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ১২জন পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত সোমবার (৫আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার পলাতক রয়েছেন কাউন্সিলররা।
আত্মগোপনে রয়েছেন ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম আলআমিন, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল শরীফ, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তরুণ কর্মকার, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫বার নির্বাচিত ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিল, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদকের ঘণিষ্ঠজন হুমায়ুন কবীর সাগর। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১,২,৩নং ওয়ার্ডে তাসলিমা বেগম, ৪,৬,৭ নং ওয়ার্ডে সাবিনা ইয়াসমিন ও ৫, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের মালা বেগম। ৫আগস্ট থেকে পৌর পরিষদে কাউকে উপস্থিত দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার সকল নাগরিক সেবা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
তবে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঢিলেঢালাভাবে পৌরভবনে উপস্থিত ছিলেন। রবিবার উপস্থিতি থাকলেও স্বাভাবিক সময়ের মতো সেবাগ্রহিতার সংখ্যা খুবই কম। ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ. কুদ্দুস ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর তাসলিমা বেগম রবিবার ১২টার দিকে পৌরসভায় গিয়ে নাগরিকদের খোজ খবর নেন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই দিন এমপি আমির হোসেন আমুর পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। লুট করে নিয়ে গেছে সবকিছুই। এছাড়াও বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার বাসভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসবের কারণেই মেয়র, কাউন্সিলররা কেউ পৌর পরিষদে যাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক সেবা বিঘিœত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শহরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে পৌরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, জরুরি সেবাও ওয়ার্ডভিত্তিক বিভিন্ন নাগরিক সেবা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।
কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকার রাস্তায় যে সড়কবাতিগুলো রয়েছে সেগুলো কয়েকদিন থেকে জ্বলছে না। একেবারে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। এমনিতেই মাঠে পুলিশ নেই তার ওপর আবার অন্ধকার। সঙ্গত কারণে এলাকায় ছিনতাই-চুরি ও লুটপাট বেড়ে গেছে।
পশ্চিম ঝালকাঠি (ওমেশগঞ্জ) এলাকার বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের পরপরই রাজশাহীসহ দেশব্যাপী বেশকিছু উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে, যা কারো কাম্য নয়। এমতাবস্থায় যারা নাগরিক সেবা প্রদান করেন তারা এই মুহূর্তে আত্মগোপনে রয়েছে। তবে যেহেতু দেশে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন হয়েছে আমি আহ্বান জানাব, যেসব নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অচল রয়েছে সেগুলো আগে জরুরি ভিত্তিতে সচল করার উদ্যোগ নেওয়া।’