74 বার পঠিত
কলাপড়া উপজেলায় রেমাল যে ক্ষতি করে গিয়েছে তা এই উপজেলার মানুষ হারে হারে মনে রাখবে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে দূর্বল হয়ে সোমবার বাংলাদেশ পার হলেও উপকূলে রেখে গেছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
আর দুর্বল হওয়ার পরও বহু সময় ধরে চলে এর তাণ্ডব। গতিবেগের ওঠানামাও ছিল বড় ব্যবধানে। ফলে এসব নিয়ে নানা মহলে চলেছে আলোচনা, সমালোচনা। এত বড় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা ছিল, আদতে সেটা না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে কলাপাড়া উপজেলার উপকূলের মানুষ, বলছেন আবহাওয়া বিশ্লেষকেরা।ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এই উপজেলায় মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল তান্ডবে বেশি ক্ষতি হয়েছে পুকুর, মাছের ঘের, বন এবং আধা পাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ির সহ বিভিন্ন ফসল। উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিপূর্ণ হিসাব এখনো নিরূপণ করতে না পারলেও শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তথ্য মতে জানতে পেরেছি , উপজেলার ৪,৫৯০ টি পুকুর এবং ৭৭৮টি মাছের ঘের অতি বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে ডুবে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের পানির সঙ্গে বের হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন এই কর্মকর্তা ।
এছাড়াও উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন”র তথ্য মতে, রেমাল’র তান্ডবে উপজেলায় ১৮০ হেক্টর আবাদি জমির শাক সবজি, ৫৮ হেক্টর জমির পাট, ২৫ হেক্টর জমির পেঁপে, ৫০ হেক্টর জমির কলা, ১০ হেক্টর জমির তিল, ১৫০ হেক্টর জমির আম, ১০৬ হেক্টর জমির আউশ বীজতলা, ১৭৮ হেক্টর জমির আউশ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে কৃষি খাতে মোট ক্ষতির পরিমান ৮ কোটি টাকা।
কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ভাস্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪টি কলেজ, ১২ টি স্কুল ও ২৫ টি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই টিন সেটের ঘর। পুরো উপজেলা জুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ তাদের জীবন রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও পরিবার পরিজন নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। এখনও পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম তথ্য মতে ধারণা করেছেন, পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সী পাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলি, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড় কলবাড়ি, খ্রিষ্টান পাড়া, চরান্ডা, চরম মোন্তাজ, চালিতবুনিয়া বড় বাইশদিয়া বেড়িবাঁধের ২২টি স্পটে ৯.১৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র ধারণা , ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কলাপাড়ায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ১৩০ জনে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৪০টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৬২০টি বাড়িঘর।
কলাপাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন , ইতিমধ্যেই আমরা যে তথ্য পেয়েছি এছাড়াও বাহিরে কোন তথ্য আছে কিনা দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণে কাজ চলমান রয়েছে। বন বিভাগ, কৃষি, শিক্ষা, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে লিখিতভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকিতে আমরা দুর্গত মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছি ইতিমধ্যেই ।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম সিডর, আইলা। কিন্তু সেসব ঘূর্ণিঝড় যতটা সময় ধরে উপকূলে তাণ্ডব চালায়, তারচেয়ে বেশি সময় ধরে চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব। রোববার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আছড়ে পড়ার পর, ১৩ ঘণ্টা ধরে ব্যাপক শক্তি নিয়ে চলে ধ্বংসযজ্ঞ। ফুঁসে ওঠা নদী,সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হয় জনপদ। সোমবার সকালে দুর্বল হওয়ার পরও এর প্রভাব উপকূলীয় এলাকায় ছিল লক্ষ্যণীয়। বাঁধে ভাঙন-জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই উপজেলায়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আচরণ ছিল অন্য ঝড়ের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি দুর্বল হয়ে সোমবার ভোর ৬টায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড়ে এবং পরে স্থল গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। কিন্তু তারপরও দিনভর ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি চলে দেশজুড়ে-ই।