241 বার পঠিত
দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর আড়াই কিলোমিটার মূল কাঠামো এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। দেশী- বিদেশী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে প্রমত্ত যমুনা নদীর ওপর দ্রুত এগিয়ে চলছে এর নির্মাণ কাজ।
ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সার্বিক ৭১ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুটি চালু হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারাদেশে চলাচল করতে পারবে। এতে কম পরিবহণ খরচে লাভবান হবে আমদানী- রপ্তানিকারকসহ ব্যবসায়ীরা। একই সাথে উত্তরাঞ্চলের জেলা উপজেলায় ব্যবসা বাণিজ্যসহ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ওপর বসেছে সারি সারি ভারি স্টিলের স্প্যান। এর ভেতরে বসেছে স্লিপারবিহীন রেলপথ। চলছে সেতুর দুই পাশে স্টেশন ও রেলপথ নির্মাণের কাজ। সমান তালে দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতুর অন্যন্যা স্ট্রাকচার নির্মাণ কাজও।
জাপান ও ভিয়েতনাম থেকে এসেছে এর নির্মাণ সামগ্রী। দিনরাত সমান তালে কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক ক্রেণের সাহায্যে সেতুর ওপর ভারি যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ করছেন। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র এখন পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার মূল কাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুতে স্লিপারবিহীন রেলপথ হবার কারণে শব্দবিহীন দ্রুতগতিতে ছুটবে ট্রেন।
সেতুর ৪৯টি পিলারের মধ্যে ৩১টি পিলারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকীগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রান্তে সেতুর ওপর বসেছে ২৬টি স্প্যান। এগুলো মরিচা প্রতিরোধী। যার কারণে কখনো বাড়তি রঙ করার প্রয়োজন হবে না।
এর ওপর বসানো হচ্ছে বজ্রপাত প্রতিরোধের যন্ত্র। সেতুর দুই পাশে মেরামত, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা পথ তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বমানের আধুনিক সব রকম সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ এই সেতু চালু হলে রেলওয়ের নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচনের আশা করা হচ্ছে।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার গতিবেগে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। ফলে মানুষের ভোগান্তি যেমন বাড়ে তেমনি চাহিদা থাকার পরও বাড়তি ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে সেতুর স্থায়ীত্ব কমে আসার আশঙ্কা করা হয়।
মাঝখানে একবার ফাটল দেখা দিলে ট্রেন চলাচলের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। দেখা দেয় আতঙ্ক। ফলে ভারতসহ বিশ্বের ভিন্ন দেশে থেকে ভারি পণ্যবাহী ট্রেনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পরিবহণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া সম্ভব হয় না। এসব ট্রেনের মালামাল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামিয়ে সড়ক পথে পরিবহণ করা হয়।
এতে বাড়তি সময় এবং অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীসহ আমদানী রপ্তানীকারকরা তেমন লাভবান হতে পারছেন না। একই সাথে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না। এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ১৬ হাজার ৭শ’ ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
করোনা (কোভিড-১৯) সংকটের কারণে মাঝখানে নির্মাণ কাজে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন কাজের গতি ফিরেছে। প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এর পুরোপুরি কাজ শেষ করতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, আমরা নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত ৭১ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। এই রেলসেতু চালু হলে এর ওপর দিয়ে ঘন্টায় ১শ’ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
এতে অল্প সময়ে কম খরচে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেনগুলো সেতু দিয়ে সারাদেশে চলে যেতে পারবে।
ফলে আমাদানী রপ্তানী ব্যয় কমবে। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। একই সাথে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবে। সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগ বিস্তৃত হবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মেচন করবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য জানান, এই সেতু ঘিরে আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।
ইতোমধ্যে সেতুর পশ্চিমপাড়ে বিসিক শিল্প পার্ক ও সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এখানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই সেতু নির্মাণ করে দেয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।