131 বার পঠিত
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি>গ্রাম-বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের সাপ খেলার ইতিহাস অতি প্রাচীন ও পুরনো।যা গ্রাম-বাংলার আবাল বৃদ্ধ বণিতা মানুষের বিনোদনের খোরাক ছিল।এসব মানুষের কাছে বশে নানা প্রজাতির বিষধর সাপের খেলা ও সার্কাস আয়োজনে জীবন্ত বিষধর সাপ চিবিয়ে খাওয়া ছিল একেবারেই আর্কষণীয় ও বিস্ময়কর।কিন্তু কালের পরিক্রমায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সু-দিন নেই সাপের খেলায়। এতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সংস্কৃতির লোকজ ঐতিহ্য।
যা একটা সময় স্থানীয় সাপুড়ে,ওঝা সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাসহ পল্লী গাঁ-গ্রামে সাপ খেলা দেখাত।পাশাপাশি বেদে বহরের যাযাবর জাতিরা জীবিকার তাগিদে এ উপজেলায় আসত।একসঙ্গে প্রায় ১৫-২০টি বেদে-বেদেনি পরিবার নদীর পার ঘেঁষে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটাত। সকাল হতেই পোঁটলাার মধ্য বিষধর সাপ নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ত গ্রাম-গঞ্জের পথে।শহর কিংবা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুটঘুটি ও বীণ বাজিয়ে সাপ খেলার জমজমাট মজমা বসাত।যা দেখার জন্য নারী- পুরুষ,শিশু-কিশোররা হুমড়ি পড়ত।মজমায় একে একে বাক্স থেকে বের করে দেখানো হত পাহাড়ি জনপদের নানা ভয়ংকর বিষধর সাপ।
এসময় সাপুড়ের বীণের করুন সুরে হাঁটু দুলিয়ে সাপকে ফণা তুলে নাচতে সাহায্য করতো।যা এমন মুহূর্ত মানুষকে অনাবিল আনন্দ দিত।খেলার ছলে বেদে-বেদেনিরা সাপ বশিকরণের তাবিজ বিক্রি করত। পাশাপাশি ঝাড়ফুঁক,রস নামা,সিঙ্গা লাগা,দাঁতের পোকা ফেলাসহ নানা রোগের চিকিৎসা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।এখন আধুনিক চিকিৎসার অবাধ প্রবাহে মানুষ গোঁড়ামি চিকিৎসা থেকে বেড়িয়ে এসেছে।এতে সাধারণ মানুষ তাদের তাবিজ ও নানা চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাসে চিড় ধরেছে।এতে সুবিধা করতে না পারায় পূর্ব পুরুষদের পেশা ছেড়ে এখন তারা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
স্থানীয় প্রবীণ সাপুড়েও আজ কালের অতলগহব্বরে হারিয়ে গেছে।নতুন করে এ পেশায় আর কাউকে দেখা যায়না।ফলে আগের মতো গ্রামের বাড়ি কিংবা হাট-বাজারে সাপ খেলার জমজমাট মজমা আর বসেনা।নানাবিধ কারণে প্রাচীন বাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী চিত্তবিনোদনের মাধ্যম সার্কাসের আয়োজনও ভাটা পড়েছে।এতে গ্রাম- বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সার্কাসে জীবন্ত বিষধর সাপ খাওয়া ও সাপের খেলা।
নতুন প্রজন্মের কাছে এ যেন অনেকটাই কাল্পনিক হয়ে উঠেছে।কালে ভদ্রে উপজেলার কাঁঠালতলী মোড়ে সাপের খেলার মজমায় দেখা মেলে সাভার থেকে আসা বেদে সাপুড়ে কালুর সাথে।তিনি জানান,আগে গ্রাম-গঞ্জে সাপের খেলায় তাবিজ বিক্রিসহ নানা রোগের চিকিৎসায় দিয়ে সংসার ভালোই চলত। আধুনিক যুগে এ পেশা আর চলছেনা।
তার পরও বাপ-দাদার ঐতিহ্যের পেশায় কোন রকমে সংসার চালাই।বিশেষ করে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন পূর্বে ভাসমান জীবনযাপন করত।বর্তমানে নদ-নদী,খাল-বিল চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় নৌকায় অবস্থান না করে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করে নানা পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে।এতে হারিয়ে যেতে বসে বেদে পল্লীর আদি জীবন-জীবিকার উৎস।হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য সাপ খেলা।