86 বার পঠিত
বাহের দেশ খ্যাত বৃহত্তর রংপুর তথা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে জনপ্রিয় ও ভিন্ন রন্ধনশৈলীর মজাদার খাবার নাপা শাকের পেলকা।এ মজাদার খাবারের গল্প এখন সবার মুখে মুখে।শুধু মজাদারই নয়,রয়েছে ভেষজ ্ঔষধি গুনে ভরপুর।শীত এলে তা যেন প্রতিটি ঘরে ঘরে পেলকা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।শীতের সকালে ধোঁয়া উঠা ভাতের সাথে পেলকা,আলু ভর্তা,কাঁচা মরিচ চিবিয়ে পেট পুওে না খেলেই যেন নয়।
এজন্য গৃহ বধূরা সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে পেলকার উপকরণ সংগ্রহে মেতে উঠেন।এসময় বাজার কিংবা বাড়ির উঠোনে লাগানো শীতের নাপা শাক,বতুয়াা.পালং শাক,বাবই শাক,খুড়িয়া শাক,পুঁই শাক,ধনে পাতা সংগ্রহ ও পরিচর্যা পর কুচিকুচি করে একত্রে রান্নার চুলার পাতিলে তুলে দেন।এর পর পাতিলে দেয়া হয় পরিমান মত লবন ও পানি।
এসব উপকরণ ভালভাবে সিদ্ধ ও পিচ্ছিল করা জন্য ব্যবহার করা হয় খাবারের সোডা ও বতুয়া শাক।পেলকার স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচ,আদা,রসুন একত্রে বেটে দেয়া হয়।সব কিছুর সংমিশ্রনে পাতিলে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়।রান্নার উপযোগী হলে ঘুটনি দিয়ে নেড়ে ঘন্ট করা হয়।এতে বাড়তি তেল মসল্লার প্রয়োজনও হয়না।রান্না শেষে পরিবারের সবাই একত্রে বসে গরম গরম ভাতে পেলকা মেখে চলে স্বাদ,তৃপ্তির ঢেকুর তোলা খাওয়ার উৎসব।
পেলকার পাতে রাখতে ভুলেন না কাঁচা মরিচ ও খাঁটি সরিষার তেল আর শুকনো মরিচের পোড়া গুড়ার মিশ্রনে তৈরি সিদ্ধ,পেড়ানো আলুর ভর্তা।খাওয়ার মাঝে পেলকার সাথে বাড়তি স্বাদ নেন কাঁচা মরিচ চিবিয়ে ও ভর্তার চিমটি মুখে তুলে।শুধু পারিবারিক ভাবে নয়,অতিথি আপ্যায়নে নামিÑদামি আয়োজনের মাঝে এ খাবারের জুড়ি নেই।শহরের মানুষ একবার খেলে বার বার খাওয়ার বায়না ধরে।এক সময় নাপা শাক ও এর পেলকা অনেকে জানতো না।
এখন সবাই চিনে এবং রান্না করে খান।পেলকা রাধুনি উত্তর দুরাকুটি পশ্চিম পড়া গ্রামের প্রবীণ গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম বলেন,দুই ভাবে পেলকা রান্না করা যায়।শীতে নাপাসহ অন্যন্য শাক দিয়ে এবং বর্ষাকালে সজনে পাতা,কচু পাতা,পাট পাতা,চাম ঘাস বা খান খুনির পাতা,রসুন শাকের পাতা,মিষ্টি আলুর পাতার সংমিশ্রনে নাপা শাকের নিয়মে পেলকা তৈরি করে এর সাথে চাল ভেজে তা গুড়া করে মিশিয়ে দেয়া হয়।একে চাল পিটালি বা চালের গুড়ার পেলকা বলে।
এর স্বাদ আরো বেশি।যা খাওয়ার জন্য পরিবারের সবাই হুমড়ি পড়ে।পাশাপাশি আমার হাতের পেলকা খাওয়ার জন্য বিয়ান-বিয়ানি,মেয়ে-জামাই,শহরে থাকা ছেলে-মেয়ে ফোন করে চলে আসে।শীতে কিংবা বর্ষা কালে পেলকা না খেলে তৃপ্তি মেটেনা তাদের।্একই গ্রামের প্রবীণ ব্য্যক্তি আমিনুর রহমান বলেন,বাহে হামার রংপুরিয়ার নাপা শাক ও সজনে পাতার পেলকা ঐতিহ্যবাহী একটি মজাদার খাবার।তাই এ শীতে ঘরে ঘরে নাপা শাকের পেলকা খাওয়ার ধুম পড়েছে।
এর পাশাপাশি আছে সিঁদল ভর্তা।মৌসুম অনুযায়ী দেশী পাট শাকের ভাজি,টোস্বা শাকের ঝোল,খাটা।মাছ,মাংস বাদে এসব তরকারি হলে তৃপ্তি সহকারে ভাত খাওয়া যায় পেট পুরে।এতে এ খাবারের ঐতিহ্য ধরে আছে আদিকাল থেকে।উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আজিজার রহমান বলেন, রংপুরের নিজস্ব অন্যান্য খাবারে মধ্যে একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার নাপা শাক ও সজনে পাতার পেলকা।
শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারই নয়,নানা সবুজ পাতার সংমিশ্রনে রান্না করা সূপ বা তরকারি ভেষজ ওষুধি গুনে ভরপুর।এতে ভিটামিন,খনিজ,ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের এক ভাল উৎস।এটি বিশেষ ভাবে ভিটামিন এ এবং সি, ফোলেট,পটাশিয়াম,আয়রন,ক্যালশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক এসিডসহ অনেক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে।যা নানা রোগ নিরাময়ের উপশম মেলে।