মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। যখন তারা বুঝতে পারে বাঙালিদের সাথে যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয় তখন নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল করে দেওয়ার ফন্দি আঁটে। পরে পরিকল্পনা মাফিক ১৪ ডিসেম্বর বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে বর্বর বাহিনী। সেই দিনের শহীদদের স্মরনে ১৪ই ডিসেম্বরকে 'বুদ্ধিজীবী দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। আর এই 'বুদ্ধিজীবী দিবস' নিয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের মনে বিভিন্ন শ্রদ্ধাবোধ ও ভাবনা তৈরি হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক রিদুয়ান ইসলাম।
বুদ্ধিজীবীরা ঘুমিয়ে আছে বাঙালির অন্তরে
বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানিরা যে নির্মম, বর্বর, নিষ্ঠুর দৃষ্টান্তস্থাপন করেছিল, বিশ্বে গণহত্যার ইতিহাসে তা কলঙ্কিত অধ্যায়। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য ও পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত বিজয়ের ঊষালগ্নে এ দিনে হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের শিক্ষক , সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। তারা মনে করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এই দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেয়া যাবে। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পৈশাচিক সে হত্যাকাণ্ড জাতির জীবনে সৃষ্টি করেছে এক গভীর ক্ষত। তারা আজ প্রত্যেক বাঙালি জাতির অন্তরে ঘুমিয়ে থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আশির্বাদ করছে।
আবির হাসান সুজন
ভুমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগই আমাদের অনুপ্রেরণা
১৪ ডিসেম্বর দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় ও কলঙ্কের দিন। ১৯৭১ সালের এইদিনে যেসব খ্যাতনামা বরেণ্য শহীদ হয়েছেন তারাই হলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী। এসব শহীদ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সঙ্গীতজ্ঞ ও সমাজসেবক। ১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তারপর যখন যুদ্ধে তাদের পরাজয় নিশ্চিত তখন পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরা যেমন দেশের জন্য তাদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গিয়েছেন, দেশের মানুষের সর্বোপরি কল্যাণের জন্য তারা যেমন অকাতরে নিজের জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করেননি, বীর সৈনিক হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন, ঠিক তেমনি যেন আমরা দেশমাতৃকার প্রয়োজনে তাদের মতো করে তৈরি হই। আর এটাই হলো বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রধান শিক্ষা।
সাঈমা আক্তার
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনুসরণে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী
মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল সাধারণ জনগণ। আর এই সাধারণ মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে যখন পাক বাহিনী বুঝতে পারল তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করে। এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একটি গোষ্ঠীর সহযোগিতায় পাক বাহিনীর সদস্যরা, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে এদেশের শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে যাতে করে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সেটি প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ কোনদিনই এই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদানকে ভুলবে না। তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ,অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্য দিয়েই অব্যাহত থাকবে আমাদের আগামীর পথচলা।
মোঃ আব্দুর রহিম
ইংরেজি ভাষা বিভাগ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৪ই ডিসেম্বর কে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালে মূলত পূর্ব বাংলাকে মেধা শূণ্য করার লক্ষ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক , সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে যাতে বাংলাদেশ মেধা শূন্য হয়ে যায়। কারণ মেধাবী জাতি একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। প্রকৃত মেধাবীরা সব সময় দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের উচিৎ তাদের এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত করা। স্ব-অর্জিত জ্ঞান শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশ ও জাতির উন্নতিতে এটির যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো।
মাহফুজা হোসেন
ইতিহাস বিভাগ
বাঙালির উপর পাকিস্তানের শেষ পেরেক
বাঙালির বিজয় অবশ্যম্ভামী দেখে পাকিস্তান নিজেদের সবচেয়ে কুখ্যাত নীলনকশা গুলোর একটি বাস্তবায়ন করেছিলো ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। যা বাঙালি ইতিহাসে একটা বিরহ ও বেদনাদায়ক দিন। পাকিস্তান ও এদেশে তাদের দোসরদের পাশবিকতার চূড়ান্ত রুপ ঐ দিন সারা বিশ্ব দেখেছিলো। বাঙালিকে মেধা শূন্য ও অকার্যকর জাতিতে পরিনত করতে তারা ঘৃণিত এই পথ বেঁছে নিয়েছিলো। স্বাধীনতার প্রাক্কালে একবার এরকম হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছিলো এবং অন্তিম মূহুর্তে এসে সেটার পুনরাবৃত্তি করেছিলো।তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অমানবিক জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বরাবরই কলম ধরেছিলো।বাংলাদেশের বিজয় অর্জনে তাদের অবদান জাতি আজও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। জাতির ঐ সূর্য সন্তানদের হত্যা বাস্তবায়নে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো যারা বেচে আছে তাদের বিচার হোক এটাই কাম্য।
ইসমাইল জাবিউল্লাহ
আইন বিভাগ
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ছাত্রসমাজ অঙ্গিকারাবদ্ধ
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। দীর্ঘ ৯ মাস মাসের সংগ্রামের পর চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা সহ আরো অনেক বুদ্ধিজীবীদের বাংলার মানুষ চিরতরে হারিয়ে ফেলে, শেষমুহুর্তে এসেও উপভোগ করতে পারলো না বিজয়ের উল্লাস। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও বাংলার প্রতিটা মানুষ গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের বীরত্বেই বাংলা পেয়েছে স্বাধীনতা। বীরত্বের অধিকারী এই বীর সন্তানদের আমরা কখনো ভুলবো না এটাই ছাত্র সমাজের অঙ্গিকার।
সাদিয়া আফরিন মৌরী
আইন বিভাগ
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT