মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নানা বয়সী রোহিঙ্গাকে ভুয়া বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া একটি চক্রের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এতথ্য জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে সক্রিয় এই চক্রটি কেবল রোহিঙ্গাদের নয়, দেশের দাগি অপরাধীদেরও ভুয়া নাম-ঠিকানার পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গত শুক্রবার ও রোববার কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকার আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি দালাল এবং আনসার সদস্যও রয়েছেন, যারা কয়েক দলে ভাগ হয়ে লাখ টাকার বিনিময়ে এই কাজ করতেন।’
গ্রেপ্তাররা হলেন- তিন রোহিঙ্গা নাগরিক উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান, রশিদুল; রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী, মোস্তাকিম, মো. রায়হান; বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া, মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ এবং আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে।
হারুন অর রশীদ জানান, ওই ২৩ জন ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, ‘শক্তিশালী এই চক্রটি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের লক্ষাধিক করে টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়। চক্রটির একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল তাদের জন্য বাংলাদেশের জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়। আরেকটি দল ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়।’
এই চক্রটির কাজের পদ্ধতি বিস্তারিত তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘৬ ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদ তৈরি করে দিতে তারা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নিত। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।’
ওই চক্রটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে দিত বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT