137 বার পঠিত
রাজধানী ঢাকায় কেজিতে গরুর মাংসের দাম প্রায় ২০০ টাকা কমে গেছে। তবে রাজশাহীতে তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ঢাকার দাম কমলেও রাজশাহীর মাংস বিক্রেতা ওই দামে বিক্রি করতে নারাজ। রাজশাহীর মাংস বিক্রেতারা দাবি করছেন, ঢাকায় অসুস্থ গরু কিনে তা মাংস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজশাহীতে সে সুযোগ নেই। রাজশাহীতে সুস্থ গরু জবাই করে তার মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এজন্য দাম বেশি।
গত কয়েক সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় দাম কমেছে মাংসের। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। এর আগের সপ্তাহেও ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে এর কোনো পরিবর্তন নেই। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট, শালবাগান, নওদাপাড়া, বিনোদপুর, লক্ষীপুর বাজারে ৭৫০ টাকাতে বিক্রি হয়েছে মাংস।
ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, গো খাদ্য ও চাহিদা কমে যাওয়ায় মাংসের দাম কমেছে। বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা একেবারেই ছিল না। দাম কমানোর পর থেকে চাহিদা আবারও বেড়েছে।
রাজশাহীর গরুর ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহীতে দাম কমানো সম্ভব না। গরু বেশি টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে এসে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকে। এই দিন মাংস বিক্রি করে আমাদের সারা সপ্তাহ চলতে হয়। আর আমাদের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাই দাম কমানো সম্ভব না।
নগরীর সাহেববাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সকালে একটি চ্যানেলে দেখলাম ঢাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। কিন্তু বাজারে এসে দেখে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক পয়সাও দাম কমাতে রাজি না তারা। যদি ঢাকায় কম দামে বিক্রি হয় তাহলে রাজশাহীতে কেন বিক্রি হবে না?’
আরেক গরুর মাংসের ক্রেতা আলেয়া বেগম বলেন, ‘সপ্তাহে একবারই গরুর মাংস কেনা হয় কিন্তু এই মাংসও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবকিছু দাম কমলেও মাংসের কমছে না। সিন্ডিকেটরা ক্রেতাদের পকেট কাটছে।’
সাহেববাজার এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা কোরবান আলী বলেন, ‘আমরা হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে আসি। প্রতি রোববার ও বুধবার সিটি হাট হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে নিয়ে আসতে হয়। তারা গরুর দাম কমাচ্ছে না তাই আমরাও কমাতে পারছি না। তারা যদি কম রাখে তাহলেও আমরাও দাম কমাবো।‘
রাজশাহী কৃষি বিপণন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফরীন হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় দাম কমলেও রাজশাহীতে মাংসের দাম কমছে না। শুক্রবারেও এই দামে বিক্রি হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করি। গত মাসেও আমরা দুটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান করা হয়েছে। যদি সামনে সপ্তাহে দাম না কমে তাহলে আমরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করবো।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের উপ পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীতেও গরুর মাংসের দাম কমেছে। গত কয়েকদিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারে মাংসের দাম বেড়েছে। আমরা দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করবো। একইসঙ্গে অভিযানও পরিচালনা করবো।’
এদিকে বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম স্থিতিশীল আছে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। এছাড়াও এই সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আদা ২৩০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।
এছাড়া করলা ৪৫ টাকা, কচু ৭০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০, শসা ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, সজনে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, বেগুন ও ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা, রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, কাতল ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ২৫০ টাকা, কই ৫৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ৩০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৯০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১২০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, শিং ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। সোনালী মুরগী ২৮০ টাকা, দেশি মুরগী ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। এ সপ্তাহে মুরগির লাল ডিম ৫২ টাকা হালি, সাদা ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা হালি, লাল ডিম ৪৪ টাকা হালি।