130 বার পঠিত
মহিষের মালিক মজনু মিয়ার সাথে সাথে হাট-বাজারে মাঠ প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে কালু নামে পোষা একটি মহিষ। মালিক মজনু মিয়া যেদিকে যায় মহিষটিও সেদিক যায়। ডাকতেও হয় না কালুকে। এছাড়া সে কারো কোনো ক্ষতিও করে না। ফলে গ্রামবাসীও কালুকে আদর করে।
মহিষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্বের এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অপরদিকে মহিষটিকে দেখতে ইসলামপুরসহ জেলা শহর থেকেও সাধারণ মানুষ ও মিডিয়া কর্মীদের ভিড় জমে মহিষ মালিক মজনু মিয়ার বাড়ি।
কৃষক মজনু মিয়া জামালপুরের ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা। কৃষি কাজের পাশাপাশি গবাদিপশুর ব্যবসাও করেন। মনজু মিয়া প্রায় ৬ বছর আগে হাট থেকে কিনে আনেন দুটি বাচ্চা মহিষ। সন্তানের মতোই লালন পালন করেন এবং আদর করে মহিষটির নাম রাখেন কালু। আস্তে আস্তে বড় হওয়া মজনু মিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে মহিষ কালুর বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে। মানুষ আর মহিষের মধ্যে এমন অনন্য মেল-বন্ধনের কথা পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে এখন মানুষের মুখে মুখে। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় কালু। কৃষক মজনু বাড়ি থেকে কাজে বের হলেই পিছু ছুটে কালু।
দীর্ঘদিন লালন পালনের পর মহিষটি বিক্রির জন্য হাটে তোলেন। কিন্তু মজনুর প্রতি মহিষের গভীর ভালোবাসা দেখে কেউ আর মহিষটি কিনতে চান না। সকাল-বিকেল ও সন্ধ্যায় মজনু মিয়ার সঙ্গে গ্রামজুড়ে ঘুরে বেড়ায় অবলা এ গবাদি প্রাণী। মজনু আর মহিষটির গভীর সর্ম্পক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়িতে ও হাট-বাজারে গ্রামজুড়ে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৬ বছর আগে দুটি মহিষ কিনছিলাম। দুটির মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এই মহিষটাও হাটে নিয়ে গিয়েছিলাম বিক্রির জন্য। আমার পিছে পিছে যায় এ কারণে হাটের মানুষ মহিষ বিক্রি করতে নিষেধ করলে বাড়িতে ফেরৎ আনা হয়।
মজনু মিয়ার স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, মহিষটি খুব ভালো লাগে আমার কাছে। আমার ছেলে-মেয়ের মতোই। যে কথাই বলি মহিষটা শোনে ও বুঝে। যেভাবে বলি সেই ভাবেই চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া করে। অনেক মানুষ মহিষটি দেখার জন্য বাড়িতে আসে।
এলাকাবাসী বলেন, মজনু যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন ডাক দিতে হয় না। মহিষ দেখে উনি কখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। মহিষ ওর পিছে পিচে ছুটতে থাকে। মজনু দৌড় দিলে মহিষও দৌড়ায়। কারো কোনো ক্ষতি করে না। মজনু খাবার দিলে খায়। ঘুরে বেড়ানো সময় আশপাশের ফসলি জমি বা গাছের কোনো ক্ষতিও করে না। বেধে রাখা তো দূরের কথা, বিরক্তও করে না কাউকে। ফলে মহিষকে আগলে রেখেছেন এলাকাবাসী।
আবুল হোসেন বলেন, আমরা সবাই জানি ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল, ময়না-টিয়ার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হয়। এগুলো না কি প্রভুবক্ত হয়। এখন দেখছি মজনুর মহিষ কালুও প্রভুবক্ত হয়েছে।
মালিকের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহিষ কালু গঙ্গাপাড়া গরু ব্যবসায়ী আব্দুল৷ গফুর মিয়া বলেন, মাঝে মধ্যেই মজনুর সঙ্গে মহিষটি বাজারে আসে। আমরা বাজারের সবাই কালুকে আদর করি।
একই গ্রামের খালেক বলেন, মহিষের সঙ্গে মালিকের বিরল বন্ধুত্ব। শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্প বাস্তবে এমন ঘটনায় প্রতিবেশীসহ এলাকার লোকজন সবাই মুগ্ধ। পশুর সঙ্গে এ বন্ধুত্ব তাদেরকেও নাড়া দেয়। ভালোও লাগে তাদের। আশেপাশের লোকজন প্রায়ই কালুকে দেখতে আসেন মজনু মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমায়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ছানোয়ার হোসেন বলেন, আদর-সোহাগ ও ভালোবাসা প্রাণীও বুঝে। মহিষ একটি গবাদি এই প্রাণী মানুষের অত্যন্ত উপকারী। এক সময় গরু-মহিষ ছাড়া আমাদের দেশে হালচাষ আর যানবাহন বলতে গরু-মহিষের গাড়িই ছিলো গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। কালের পরিক্রমায় সেগুলো বিলুপ্তপ্রায়। ওই মহিষটি হয়তো ভালবাসার কারণে মালিকের বন্ধু হয়ে গেছে। মহিষ আর মানুষের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব সত্যি নজিরবিহীন।
এলাকাবাসীর দাবি, এতদিন পর ইসলামপুরে মহিষের সঙ্গে কৃষক মজনু মিয়ার বন্ধুত্ব সেই মহেষ গল্পের কথা আবারো মনে করিয়ে দিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ গল্প অনেকেরই জানা। গল্পে কৃষক গফুর সন্তানের মতো ভালোবাসে তার পোষা গরু মহেশকে। মহেশ গল্পে মালিক ও পশুর মধ্যে যে ভালোবাসা এবার সেই গল্পের আধুনিক রূপ যেন বাস্তবে ফুটেছে ।