187 বার পঠিত
জামালপুরের মেলান্দহে হতদরিদ্র-ভাতাভোগিরা প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লাখ টাকা গায়েব হবার অভিযোগ ওঠেছে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসের আওতায় বয়স্ক ভাতা প্রাপ্ত- ১৭ হাজার ৯শ’ ৪৪ জন, বিধবা ভাতা প্রাপ্ত ৮ হাজার ৪শ’ ২২ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত সংখ্যা ৫ হাজার ২শ’ ৭৫ জনসহ সর্বমোট ৩১ হাজার ৬ শ’ ৪১ জন ভাতাপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী । প্রতারকরা কৌশলে মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভাতাভোগিদের অ্যাকাউন্ট অরক্ষিতের বিষয়টিও এখন আলোচনায় আসছে।
আলাইপাড় গ্রামের বিধবা জয়নব জানান-একদিন সন্ধ্যায় আমার কাছে সমাজসেবা অফিসের পরিচয় দিয়ে মোবাইলে আমার পুরো পরিচয় ভাতার ধরণ তুলে ধরে বলে যে, আপনার ভাতা গ্রহণের নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বরের পিন কোড ম্যাসেজ দেন। বিধবা জয়নব বলে, আমি তো ম্যাসেজ কি তাও বুঝি না। সমাজসেবা থেকেই পিন কোড নম্বর দিতে নিষেধ করেছে। তখন বলে একটা শিক্ষিত মানুষের কাছে মোবাইলটা দিন। ফোনটা আমার নাতিনকে মোইল ফোন দেয়। তাকে বলে, পিন কোড নম্বর না দিলে মোবাইলে টাকা যাবে না। এ কথা শোনে সে পিন কোড নম্বরটা প্রতারককে দেয়। পরে দেখতে পায় মোবাইল একাউন্টে টাকা নাই। শুনেই জয়নব কান্না শুরু করে।
বালুআটা গ্রামের বাক-শ্রবন প্রতিবন্ধী মিনহাজ উদ্দিনের পুত্র হেদায়েতুল্লাহ জানান-০১৭৭৮৭৩৭৭৫১ এই নম্বরে নগদ একাউন্টে টাকা আসে। একদিন ফোন করে আমার বোন মিতু আক্তারের পুরো পরিচয় তুলে ধরে। সমাজসেবা অফিসের পরিচয় দিয়ে বলে যে, আপনার মোবাইলটা সমস্যা হয়েছে। ভাতার টাকা ঢুকছে না। আপনার মোবাইলের ম্যাসেজে ওটিপি গেছে। সেটা জানান। ওটিপি জানিয়ে দেয়। পরে দেখা যায় তার বোনের অ্যাকাউন্ট নম্বরও পরিবর্তন করেছে। সমাজসেবা অফিসে জানানোর পর আগের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু একাউন্টে টাকা নাই।
মেলান্দহের োতেলিপাড়া গ্রামের আবদুল কদ্দুস, পুটিয়াপাড়ার রাবিয়া বেওয়া, সাহাজাতপুরের সুফিয়া বেওয়া, গোবিন্দপুরের রাশেদা বেওয়া, ঘোষেরপাড়ার মমেনা বেগম, কাঞ্চন মালা, ডেফলার গীতিনাথ বর্মন, বন্দোরৌহার আছিরন (ফাতেমা) সহ আরো অনেকেই জানান-একই কায়দায় অফিস বন্ধের সময়ে ফোন করে আমাদের কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ফুলকোচা ইউপি’র মহিলা মেম্বার নুরুন্নাহার বেগম অধরা জানান-ভাতাভোগিদের সমস্যার কথা শুনে সমাজসেবা অফিসে এসে দেখি অনেক প্রতারিতরা ভীড় করেছে।
সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে শতাধিক প্রতারিত ভাতাভোগিদের দেয়া তথ্য এবং মোবাইল চেক করে ইতোমধ্যেই প্রতারকদের ০৯৬৩৮৬৩৭৫৩৯. এই সিরিজের ৮/১০টি ফোন নম্বরও সনাক্ত হয়েছে। বছরে দুইবার বয়স্ক ভাতা-১৮৫০ টাকা, বিধবা ভাতা ১৬৫০ টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ২৫৫০ টাকা হারে প্রদান করা হয়।
মেলান্দহ পৌরসভার গোবিন্দপুরের বিধবা রাশেদা ও কুলসুম জানান-০৯৬৩৮৬৩৭৫৩৯ এই নম্বর থেকে সমাজসেবা অফিসের পরিচয়ে নগদ একাউন্টের পিন কোড নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নাম কবির হোসেন, গ্রাম-বানিয়াবাড়ি, সমাজসেবা অফিসে চাকরি করে বলে জানানো হয়। অথচ সমাজসেবা অফিসে এই নামে কোন লোক নাই।
মেলান্দহ পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর জমিলা বেগম জানান-তার মা সহ বেশ ক’জন ভাতাভোগিরও টাকা এভাবেই উধাও হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভাতা ভোগিদের নাম-ঠিকানা-ভাতার ধরণ এমনকি মোবাইল নম্বরসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি সরকারি অফিস থেকে কিভাবে বাইরের লোকদের কাছে গেল? যে নম্বর থেকে ফোন করেছে কিংবা ম্যাসেজ আদান প্রদান করা হয়েছে, সেই নম্বর ট্যাকিং করলেই প্রতারক সনাক্ত হবার কথা।
সমাজসেবা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) ফারুক হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান-প্রতারিত এবং প্রতারকদের মোবাইল নম্বরসহ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন মহলে এগুলো পাঠানো হবে। এর আগেও কিছু প্রতারকদের মোবাইল নম্বর সনাক্তপূর্বক ভাতাভোগিদের অর্থ ফেরৎ আনা হয়েছে। ভাতাভোগিদের অফিসিয়ালি তথ্য বাইরে যাবার বিষয়ে ফারুক হোসেন বলেন-ভাতাভোগিদের নাম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার তালিকা চূড়ান্ত বাছাই শেষে আমাদের কাছে আসে। এই তালিকা সমাজসেবা অফিস, সার্ভার এবং মোবাইল ব্যাংকিং (নগদ)-এ জমা হয়। তথ্য ফাঁসের সাথে জড়িত কিংবা হ্যাকিং যাই হোক, সেটা তদন্তেই হয়ত বিষয়টা পরিস্কার হবে। প্রতারক রোধে ভাতাভোগিদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কনফার্মের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।