50 বার পঠিত
প্রতিবছরের মতো এবারো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীর বুড়ির বাঁধে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকালে বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন আশে পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। তবে ক্রেতারা বলছেন মাছের দাম নেয়া হচ্ছে বেশি। আর জেলেরা বলছেন কারেন্ট জাল ও রিং জালের দখলে নদী। পাওয়া যাচ্ছে না মাছ।
হাতে জাল নিয়ে সারি বদ্ধ হয়ে পানিতে নেমেছেন কয়েক হাজার মানুষ। কেউ ভেলায়,কেউ ছোট নৌকায় করে চলছে মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতা। দৃশ্যটি ঠাকুরগাঁও বুড়ির বাধ এলাকার। প্রতি বছরের ন্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের শুক নদীর বুড়ি বাঁধ এলাকার। শুরু হয়েছে মাছ ধরা উৎসব।
গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয় বাধের পানি। সোমবার থেকেই শুরু হয়ে জেলেদের আগমন। উৎসবটি চলবে মঙ্গলবার দিনব্যাপী। এই উৎসবে যোগ দিয়ে অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বাদ যাননি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও বসে নেই। খালি হাত দিয়েই কাঁদার মধ্যে মাছ খুঁজছেন। অনেকে আবার ভিড় জমিয়েছেন মাছ ধরা দেখতে। এই মাছ উৎসব ঘিরে বাঁধ এলাকায় বসানো হয় বিভিন্ন খাবারের দোকান।
জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট (স্লুইসগেইট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
৫০ একর এলাকাজুড়ে সুক নদীর উপর নির্মিত বুড়ির বাঁধ মৎস্য অভয়াশ্রম। সারা বছর কাউকে এখানে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুধু জমানো পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এ সময়ই মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়।
সদর উপজেলার হাজিপাড়ায় থেকে আসা অন্তু বলেন, প্রতিবারে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে নদীতে রিং জাল ব্যবহারের কারণে আমরা যারা ফিকা জাল ব্যবহার করি তাদের অনেক সমস্যা হয়।
বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা গ্রাম থেকে আসা বাবুল শেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে জাল দিয়ে মাছ মারছি। খুব বেশী মাছ ধরতে পারেনি। গতবারে অনেক মাছ পেয়েছিলাম। এবারে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। রিং জাল ব্যবহারের কারণে এবারে মাছ অনেক কম।
অপরদিকে মাছ কিনতে আসা নজরুল ইসলাম , অসিম আকরাম রঞ্জিত ঠাকুর সহ বেশ কয়েকজন বলেন, বাজারের তুলোনায় এখানে এবারে মাছের দাম অনেক বেশি। দেশী মাছ বেশি না পাওয়া গেলেও যা উঠা হচ্ছে তার দাম বেশি চাচ্ছে। এরপরেও এসেছি দেখি কি নেয়া যায়।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যাকারিয়া বলেন, প্রতিবছরে এই সময়ে এই বাধের জলকপাট খুলে দেয়া হয়। এরফলে অনেক মানুষের একটা মিলন মেলায় পরিণত হয় স্থানটি। আমরা মনে করি এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাছের চাহিদা পূরণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুক নদীর উপর নির্মিত বুড়ির বাঁধ মৎস্য অভয়াশ্রম। সারা বছর কাউকে এখানে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুধু জমানো পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এ সময়ই মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়।