1. admin@daynikdesherkotha.com : Desher Kotha : Daynik DesherKotha
  2. arifkhanhrd74@gmail.com : desher kotha : desher kotha
বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিজ্ঞান শিক্ষার দৈন্যতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ - দৈনিক দেশেরকথা
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায় :ওবায়দুল কাদের গলাচিপা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের নতুন কমিটি, সভাপতি সোহেল, সাধারণ সম্পাদক জিকো একনেক সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন পঞ্চম ধাপে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গণহত্যা চলছেই, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ রাজধানীতে আজ থেকে ৫ স্থানে কৃষকের দামে তরমুজ বিএনপি নেতাদের চোখে স্বৈরতন্ত্রের চশমা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরগঞ্জে বারো জুয়াড়িসহ গ্রেফতার-১৩ দেশের অধিক জনগোষ্ঠী মানুষ যাতে সেবা পায় সে ব্যাপারে দ্বায়িত্বশীল হতে হবে – জেলা প্রশাসক পটুয়াখালী  কিশোরগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ১৫টি পরিবারের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ

বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিজ্ঞান শিক্ষার দৈন্যতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

 342 বার পঠিত

বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পিছিয়ে যাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষায় অনীহা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে । এই মুহুর্তে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করে গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। উন্নত এবং সমগ্র বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রদানকারী সকল দেশ বিজ্ঞানের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। একমাত্র বিজ্ঞানই পারে নতুন নতুন গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক জাতি গঠন করতে। ঠিক যে সময়ে পৃথিবীর সমগ্র দেশ বিজ্ঞানের উন্নয়নে তৎপর, সে সময়ে বাংলাদেশের চিত্র হতাশা জনক। বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা সম্পর্কে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন, ‘শিল্পবিপ্লবোত্তর ইউরোপে যখন বিজ্ঞান বিকশিত, আমাদের দেশে তখন মধ্যযুগের অন্ধকার। ইউরোপে অন্ধকার যুগ অর্ধ-সহস্র বৎসর স্থায়ী হলেও আমাদের দেশে তার পরমায়ু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। সমুদ্রপার থেকে আমদানি করা বিজ্ঞান দিয়ে যে জোড়কলম বাঁধা হয়েছিল, তা যে আজও ঠিকমতো জোড়া লাগেনি তা বোঝা যায় বাংলাদেশে তরুণ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানশিক্ষায় অনীহা দেখে। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত “বিজ্ঞানে অনাগ্রহ, কমছে শিক্ষার্থী” প্রতিবেদনে এটি স্পষ্ট যে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী গবেষণায় এটি স্পষ্ট যে বিজ্ঞানে আমাদের গতি নিম্নমুখী। “বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষার্থীদের অনীহার কারণ ও করণীয় কি?” এমন বিষয়কে সামনে রেখে আমরা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষন ইনষ্টিটিউট (এইচএসটিটিআই), বরিশালের ২০২২-২০২৩ সালের ৯৬তম ব্যাচ
(রসায়ন-ইতিহাস) এর একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে আমি মো: আমিনুর রহমান শামীম, সহকারি অধ্যাপক, (রসায়ন), চাঁদপাশা স্কুল এন্ড কলেজ, বরিশাল আমার প্রশিক্ষণার্থী সহকর্মীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সহ গ্রামাঞ্চল ও শহরতলীর বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করি। আশাকরছি ২০২৩ সালের বছর ব্যপী বরিশাল বিভাগ ও শরিয়তপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবো। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে কেন? বিজ্ঞান বিষয়কে আধুনিক ও সহজসাধ্য করতে যে সকল উপাদান দরকার সেগুলো চিহ্নিত করতে পারলে শিক্ষার্থী হ্রাসের কারণও অনুসন্ধান করতে পারবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থী হ্রাসের কারণ ও প্রতিকার হিসেবে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাবিদগণদের বিভিন্ন লেখা, টকশোতে তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ , অনলাইন পোর্টালের গুরুত্বপূর্ণ লেখা ও ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান থেকে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে যতটুকু উপলব্দি করতে পেরেছি তা তুলে ধরলাম-
১। বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। শিক্ষককে বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট বিষয়ে তত্বীয় জ্ঞান থাকলে হবে না, তাকে হতে হবে হাতে কলমে দক্ষ । বিষয়টির সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য জ্ঞান যা শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলবে ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা জরুরি । পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিচালনায় সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও বাস্তব সত্য হলো বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বের সাথে আমরা কাজ করি না। আমরা অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ির প্রতিযোগীতায় নেমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ফেলেছি! বিজ্ঞানের অধিকাংশ শিক্ষিকগণ প্রতিষ্ঠানে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের মত রাউন্ড দিয়ে গিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে ফিরে শিক্ষাকে বিক্রি করেন! শহরের প্রতিষ্ঠানে এই সমস্যাটি প্রকট হলেও গ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন কারণ অস্বচ্ছল পরিবারের স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যবসাটা ঠিক জমে ওঠে না! তবে আমাদের পিছন ইতিহাস যথেষ্ট উন্নত যখন গ্রামের প্রতিষ্ঠানে অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষাদান করতেন। আমার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পিঁয়াজের কোষ দেখে। আমি যে প্রতিষ্ঠানে (বরিশাল জিলা স্কুল ,বরিশাল) পড়তাম সেই প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ নেয়ার পূর্বেই সকল শিক্ষার্থীদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র, এসিড, ক্ষার, লবন, ফুল, ব্যাঙ, কেঁচো, কঙ্কাল, প্রিজমে আলোর প্রতিসরণ ইত্যাদি দেখার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে এমন চিত্র একসময় খুবই স্বাভাবিক ছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান গুলোতে দায়িত্ববান মেধাবী শিক্ষকদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় আমদের বিজ্ঞান শিক্ষা পিছিয়ে পড়েছে।

২। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের মূল স্বাদ গ্রহণের লক্ষ্যে উন্নত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা দরকার। বাংলাদেশের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণাগারের সংখ্যা অতি নগণ্য। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি থাকলেও এর যথাযথ ব্যবহার নেই। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাবলিক পরীক্ষার পুর্বে শিক্ষার্থীদের ল্যবরেটরিটি দেখানো হয়! আবার এ কথাও সত্য ল্যবরেটরি হিসেবে একটি কক্ষ ও কয়েকটি যন্ত্রপাতিই শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি অধিক আগ্রহ গড়ে তুলতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান সমৃদ্ধ গবেষণাগারের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে গবেষণা করার সুযোগ দিতে হবে। এমন অসংখ্য প্রতিষ্টান আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আগ্রহ দেখায় না। এর অনেকগুলো কারণের একটি জরিমানা ভীতি। শিক্ষার্থীদের প্রথমেই জানানো হয় কোন যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে তাকে জরিমানা প্রদান করতে হবে। এর ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষণ থেকে বিরত থাকে।

৩। আধুনিক তথ্য ও গবেষণা সমৃদ্ধ পাঠ্যপুস্তকের বহুল ব্যবহার যা শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন জ্ঞান আহরণে সহযোগীতা করবে। পাঠ্যপুস্তকের পাশপাশি অসংখ্য বিজ্ঞান বই থাকবে যা তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করবে। দেশ বিদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষণা সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকা খুবই প্রয়োজন। লক্ষ্য করা যায় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের সকল বিজ্ঞানী ও তাদের কাজ সম্পর্কে খুব কমই জানে। শিক্ষার্থীরা অধিক গবেষণা সম্পর্কে জানলে তাদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হবে যা তাদের নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান পিপাসা বৃদ্ধি করবে। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে হবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক সৃজনশীল পদ্ধতির অনুকরণে, তবুও তথ্য ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ করা আবশ্যক। মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানের বইয়ের চিত্রগুলো রঙিন হওয়া খুবই জরুরী। একজন শিক্ষার্থী পড়ছে গাছের পাতা সবুজ কিন্তু দেখছে সাদা-কালো যা তাদের চিন্তার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করবে।

৪। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ভাবনার প্রসারণের স্বার্থে বিজ্ঞান কর্মসূচি ও ভ্রমণের আয়োজন করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিজ্ঞান উৎসব, বিজ্ঞান পাঠের আসরের আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের মূল বিষয় অনুধাবন করতে পারবে। নিজেদের প্রতিভা উপস্থাপনের লক্ষ্যে নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞান স্থাপনা ভ্রমণ শিক্ষার্থীদের চিন্তার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবে। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। তবে এক্ষেত্রেও শহরের কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রতীয়মান হলেও গ্রামে খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না।
৫। সিলেবাস আরেকটি বড় সমস্যা। বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্য যে ব্যবসায় শিক্ষা বিষইয়ের তুলনায় বিজ্ঞান বিষয়গুলোর সিলেবাস প্রায় তিন গুণ বড়! সিলেবাস প্রণেতাগণ আমাদের তরুণ বিজ্ঞানশিক্ষার্থীদের বয়স ও সামর্থ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সিলেবাস প্রণয়ন করতে পারেন নি বলে আমি মনে করি। তাঁরা বিবেচনা করেননি আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট। মনে হয়, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যাইয়েই একেকজন বিজ্ঞানশিক্ষার্থীকে তাঁরা আইনস্টাইন বানাতে চান। এমন অনেক বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাইয়ে পাঠ্য হওয়া সমীচীন। অপ্রিয় হলেও সত্য, আমাদের বইগুলো আদৌ সুখপাঠ্য নয়, পড়ানোর মতো উপযুক্ত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকও স্বল্পসংখ্যক। বইগুলো রচিত হয়েছে আমলাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাস্তবতাবর্জিত সুপারিশে এবং কেবলমাত্র ব্যবসায় মনোবৃত্তির প্রকাশকদের লাভালাভের নিরিখে। উপস্থাপনা, রচনাশৈলী ও প্রকাশনার মান এতই নিম্নমানের যে পাঠ্যবই হিসেবে তা কোনো মননশীল তরুণকে আকর্ষণ করতে পারে না! জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী বিজ্ঞানশিক্ষার ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করা যেন প্রতিভা বিকাশ, জ্ঞানসাধনা এবং সৃজনশীলতায় তারা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারে এবং… একটা সমন্বিত শিক্ষার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানশিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা।’ কিন্তু বাস্তব চিত্র ও গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে কি তা প্রতিফলিত? নবম ও দশম শ্রেণিতে একটি সমন্বিত পাঠক্রমের বদলে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি ধারায় পৃথকীকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে কতটা সুফল হয়েছে জানিনা তবে তা ভেবে দেখার সময় এসে গেছে। প্রায় দুই দশক আগে প্রতিবেশী ভারতসহ পৃথিবীজুড়ে মাধ্যমিক স্তরে পৃথক শিক্ষাধারার অবসান ঘটিয়ে একমুখী শিক্ষা চালু হয়েছে । কিন্তু আমাদের জাতীয়শিক্ষানীতিতে তার সমর্থন নেই। উৎপাদনী শক্তির সার্বিক বিকাশের সঙ্গে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের সংযোগ, যথোপযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন, মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, আনন্দদায়ক বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ, মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক ব্যবহারিক ক্লাস, তাত্ত্বিক ও ফলিত বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন, উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, বিজ্ঞানানুগত্য প্রতিষ্ঠা, মেধা পাচার বন্ধ, যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি ছাড়া বিজ্ঞান সাধনা এবং সৃজনশীলতা য়আন্তর্জাতিক মান অর্জন অধরা স্বপ্নই থেকে যাবে।

৬। আজকের এই লেখার মূল বক্তব্যটি স্পষ্ট ও প্রতীয়মান যে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের প্রধান উপাদানগুলোর অপূর্ণতায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহের প্রধান কারণ। এছাড়াও পড়াশোনা শেষে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সুষ্টি না হওয়ার অন্যতম কারণ। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে বাণিজ্য শাখা চালুর পর থেকে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষাথী কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিষয়টি সবচেয়ে অগ্রসরমান ক্ষেত্র। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের দ্রুত প্রসার বাণিজ্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে। অপরদিকে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের কর্মস্থল গবেষণা প্রতিষ্টানগুলোর অবস্থা নাজুক। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। দেখা যায় বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী এম.বি.এ করছেন ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত হচ্ছেন। সেই তুলনায় বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না । ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।বিজ্ঞান পঠন-পাঠন অপেক্ষাকৃত কঠিন। সে জন্য দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তুলনামূলকভাবে কম। প্রযুক্তির অতি দ্রুত বিকাশ, বাণিজ্যের প্রসার এবং করপোরেট পুঁজির দুর্দমনীয় বিশ্বায়ন শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন বিন্যাসের অন্যতর কারণ। সেই সঙ্গে সিলেবাসের মাত্রাতিরিক্ত চাপ, বিজ্ঞানশিক্ষার অত্যুচ্চ ব্যয়ভার, শিক্ষায়াতনগুলোতে বিজ্ঞান পাঠের অনুপযোগী পরিবেশ, বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করে প্রযুক্তির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাত, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ও তা ব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমান অনীহা, কোচিংনির্ভরতা, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি নানা সমস্যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানবিমুখ করে তুলছে। আবার একটি আইনি বিধিনিষেধও আছে। বিজ্ঞান শাখায় মাধ্যমিক পাস না করে কেউ উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তিই হতে পারে না; কিন্তু যেকোনো শাখার শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষায় ভর্তি হতে পারে। দেশে বহু স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান পাঠের সুযোগ নেই। ওসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানের দরজা চিরদিনের তরে বন্ধ থাকে।
৭। চটকদার ডিগ্রি (বিবিএ/এমবিএ), করপোরেট জগতে মোহনীয় চাকুরির প্রলোভন আর আইনি খোলা দরজা দিয়ে ব্যবসায়শিক্ষা শাখায় ঢুকছে সম্ভাব্য বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা। সূত্রানুযায়ী ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল ১৪,৫১,০০০ জন, এর মধ্যে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে ২,৪০,০০০জন, ২০১১ সালে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী ২,১৬,০০০জন এবং ২০১৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১,৩৮,০০০ জন। এই সংখ্যা থেকে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের অবস্থান সহজে অনুধাবন করা যায়। বিজ্ঞানশিক্ষার্থীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কমছে। ২০২১ সালে বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল মাধ্যমিকে ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ আর উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র ১৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতে প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীদের ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশই হলো বিজ্ঞান শাখার, আধুনিক ভারত বিনির্মাণে যাদের ভূমিকা অপরিসীম। এখন প্রশ্ন হলো- পরাধীন যুগে যা-ই ঘটুক, স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার এ দুরবস্থা কেন? ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। ১৯৯০ সালে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল মাধ্যমিকে ৪২ দশমিক ৮১ শতাংশ আর উচ্চমাধ্যমিকে ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, এই সর্বোচ্চ শতকরা হার আর কখনোই স্পর্শ করা যায়নি। উচ্চমাধ্যমিকে ১৯৯৬ সালে সর্বনিম্ন পর্যায়ে প্রায় অর্ধেকে, মাত্র ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে নেমে যায়। এরপর ২০০২ সালে তা বেড়ে হয় ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তারপর আবার পতনের শুরু এবং ২০১৩ সালে তা নেমে আসে শতকরা ১৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে! অভিন্ন চিত্র মাধ্যমিকেও। বিজ্ঞান পরীক্ষার্থীর শতকরা হার ১৯৯০ সালের ৪২ দশমিক ৮১ থেকে কমতে কমতে ২০১৩ সালে হয় মাত্র ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ! বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষায় কী ভয়ংকর শিক্ষা ধব্বস! ঔপনিবেশিক যুগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়শন ফর কাল্টিভেশন অব সাইয়েন্সকে কেন্দ্র করেই বাংলায় বিজ্ঞানশিক্ষা গবেষণার সূত্রপাত। এসব সংস্থার সামগ্রিক অবদান জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, অঘোরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বসু, কুদরাত-ই-খুদা প্রমুখ বিজ্ঞানী। অঘোরচন্দ্র হলেন প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী, যিনি বিদেশ থেকে (এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়) রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু কোনো বিজ্ঞান সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পাননি তিনি, প্রশাসনে কেরানিগিরিতে তাঁর প্রতিভার অপচয়ঘটে, যেমনটি ঘটে সি ভি রমন বা কুদরাত-ই-খুদার ক্ষেত্রেও। গবেষণাস্থল নয়, শাসকশ্রেণি কুদরাত-ই-খুদার কর্মস্থল আবিষ্কার করে শিক্ষা প্রশাসনে!
অবশেষে এবলতে চাই, শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহী এমনটা ভাবার কোন সুযোগ নেই। একজন বিজ্ঞান শিক্ষক , সামাজিক ও স্বচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী হিসেবে হতদরিদ্র ও প্ললী অঞ্চলে গমন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। প্রতিক্ষেত্রে আমি বিজ্ঞানের প্রতি তাদের তীব্র আগ্রহ লক্ষ্য করেছি । কিন্তু তাদের এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে অনেক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বি.সি.এস.আই.আর ,বিজ্ঞান একাডেমী বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি, ডিসকাশন প্রজেক্ট, বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, অনুসন্ধিৎসু চক্র প্রভৃতি সংগঠন বিজ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ থাকলে তা দূর করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী বিজ্ঞান সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় বিজ্ঞান কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশনের কাজ হবে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অনুসন্ধান ও পরিকল্পনা গ্রহণ। এর আওতায় থাকতে পারে- বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণাগারের আধুনিকায়ন, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, গবেষকদের সার্বিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অধিক গুরুত্ব প্রদান ইত্যাদি। এই সকল ক্ষেত্রের সঠিক বাস্তবায়নই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ অর্জন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত এক জাতি। গড়ে ওঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

লেখক ও কলামিস্ট –
আমিনুর রহমান শামীম
সহকারী অধ্যাপক (রসায়ন)
চাঁদপাশা স্কুল এন্ড কলেজ, বরিশাল

দেশেরকথা/বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা

এই সাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।কপিরাইট @২০২২-২০২৩ দৈনিক দেশেরকথা কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park