80 বার পঠিত
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি>টানা ১৫দিন হতে চলছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রচন্ড তাপদাহ। সেই সাথে শুরু হয়েছে চলতি ইরি-বোর মৌসুমের কাটামাড়াই। বাড়তি মজুরি দেওয়ার পরও পুরুষ ও নারী দিনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। পাকা ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক-কৃষাণীরা। চুক্তিভিত্তিক বিকালে বা রাতে ধান কাটামাড়াই করছে বর্গা চাষি ও দিনমজুরগণ। প্রচন্ড তাপদাহ অব্যাহত থাকলে যথাসময়ে পাকাধান ঘরে তোলা সম্ভাব হবে না দাবি করেছেন কৃষক-কৃষাণীগণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৬ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর চাষাবাদ হয়েছে। বিভিন্ন জাতে উফশী ও হাইব্রিড ধান চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। ইতিমধ্যে ধান কাটামাড়াই শুরু হয়েছে।
দহবন্দ ইউনিয়নের কৃষক বাবু মিয়ার বলেন, নিচু জমির ধান কাটামাড়াই শুরু হয়েছে পুরোদমে। তবে প্রচন্ড গরম এবং তাপদাহের কারণে দিনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব কৃষক ধান কাটামাড়াইয়ের কাজ করছে, তারা চুক্তি ছাড়া দিন হাজিরা ভিত্তিক কাজ করছে না। এক বিঘা জমির ধান কাটামাড়াইয়ের জন্য দিতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ধানের জমি চুক্তি নিয়ে পড়ন্ত বিকালে এবং রাতে ধান কাটামাড়াই করছে তারা। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিঘা প্রতি বেশি দিতে হচ্ছে দিনমজুরকে। এ কারণে ইরি-বোর চাষাবাদে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
সুর্বণদহ গ্রামের কৃষাণী ছালেহা বেগম জানান, নারী শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটামাড়াইয়ের পর পরিচর্যা করা অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িছে। বাড়তি মজুরি দিয়ে কাজ করে নিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রামের দিনমজুর মোনারুল ইসলাম জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে সারাদিন ব্যাপী ধানক্ষেতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে চুক্তি নিয়ে বিকালে এমনকি রাতে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি জিনিসের দাম অর্ধেক বেড়ে গেছে, ৫০০ টাকা দিন হাজিরা দিয়ে এখন আর পোশায় না। দিন হাজিরা কাজ করে সংসার চলে না। যার জন্য চুক্তি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, একবিঘা জমিতে উফশী জাতের ধানের ফলন হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ মন এবং হাইব্রিড জাতের ধান হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে। সে মোতাবেক একবিঘা জমিতে চারা রোপন থেকে ধান কাটামাড়াই পর্যন্ত মোট খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার হতে ১৮ হাজার টাকা। এতে করে দেখা যেসব চাষি নিজেরা জমিতে কাজ করতে পারে শুধু তাদের ইরি-বোর চাষাবাদ লাভজনক।
বেলকা বাজারের ধানের ব্যাপারী করিম মিয়া জানান, কাঁচা ধানে ঘাটতি হয়। সে কারণে মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে কিনতে হচ্ছে। শুকনা ধানের দাম বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবির জানান, চলতি মৌসুমে ইরি-বোর ধানক্ষেতের ভাল ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে নিচু জমির ধান কাটামাড়াই শুরু হয়েছে। যান্ত্রিক এই যুগে দিনমজুর খুব একটা বেশি লাগে না। তবে উপজেলায় এখনও পুরোদমে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান কাটামাড়াই শুরু হয়নি। সেই কারণে দিনমজুরের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। তাপদাহ কেটে গেলে দিনমজুরের চাহিদা থাকবে না।