ঔষধি গুণে গুণান্বিত, রসালো ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অভাবনীয় সাফল্যের পথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নাছির উদ্দীন সরকার । ড্রগন ফলের গুনাগুন ও অর্থনৈতিক সফলতার কথা চিন্তা করে সাড়ে ৫ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন।এ বছর ১ একর জমিতে ড্রাগন ফল ২৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করলেও আগামী বছরেই তার টার্গেট কোটি টাকা।
উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের নাছির উদ্দীন সরকারের উদ্যোগে তৈরি করেছেন ভিয়েতনামের ড্রাগন ফলের বাগান।
নাটোর, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ার ড্রাগনের বাগান ঘুরে সেখান থেকে চারা এনে ২০১৯ সালে প্রথমে ২একর জমির মধ্যে বানিজ্যিকভাবে তৈরী করেন ড্রাগন ফলের বাগান।
সরেজমিনে গিয়ে তার বাগানে সারি সারি ড্রাগন ফলের গাছের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সাড়ে ৫ একর জমির মধ্যে তার ৭ টি ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। এছাড়াও তার কয়েকটি পুকুরের পাড়েও ড্রাগনের গাছ লাগানো আছে এবং এর জমির পরিমান ৬৫ শতকের মতো। তার ৭টি বাগানের মধ্যে ৫টি বাগান স্থানীয় পদ্ধতিতে লাগানো আর ২টি চাইনিজ পদ্ধতিতে। স্থানীয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রতি সিমেন্টের খুঁটির সাথে ৫টি করে ড্রাগন গাছ লাগানো হলেও চাইনিজ পদ্ধতির ক্ষেত্রে একই খুটিতে রাখা যাচ্ছে ১৫ টি গাছ। উদ্যোক্তা নাসির উদ্দিন সরকার সাড়ে ৫ একর জমির ড্রাগনের বাগানের মধ্যে ৫ একরে লাগানো হয়েছে স্থানীয় পদ্ধতিতে আর চাইনিজ পদ্ধতিতে লাগানো হয়েছে ৫০শতক জমিতে। ড্রাগন ফলের গাছ যাতে দীর্ঘ দিন টিকে থাকতে পারে সেজন্য খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সিমেন্ট ও রড দিয়ে বানানো খুঁটি।
দেশের বিশিষ্ট কৃষিবিদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানায়, ড্রাগন ফল অত্যন্ত লাভজনক একটি ভেষজ ফল। এই ফল এখন অত্যন্ত লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। এটির পুষ্টি গুণও অনেক। এই ড্রাগন গাছের কান্ড থেকে পাঁকা ড্রাগনটি কাটার পর নতুন করে আবার ফল দেয়। ড্রাগন গাছগুলো থেকে প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় ফল পাওয়া সম্ভব।
নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, আমার এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন লোকজন আসে ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে। ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাণ্ড থেকে হয়। এই ফল চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের কোন প্রয়োজন হয় না। শুধু মাত্র জৈব সারই যথেষ্ট। গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে এবং ফলের বয়স ২৮-৩০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়।
সুফি সাধক নাসির উদ্দিন সরকারের ড্রাগনের বাগানের তদারককারী একাজে প্রশিক্ষিত টাঙ্গাইলের মুস্তাফিজুর রহমান জানায়, আমরা এবছর ১ একর জমির ড্রাগন ফল ঢাকার কাওরান বাজারের কয়েকজন পাইকারের কাছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ২৫ লক্ষাধিক টাকা। আগামী বছরে আমাদের সাড়ে ৫ একরেই ড্রাগনে ফলন দিবে। সে হিসাবে আগামী বছরেই কোটি টাকার উপরে বিক্রি করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি। বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন এই সুফি সাধক নাসির উদ্দিন সরকার।
উদ্যােক্তা সুফি সাধক নাসির উদ্দিন সরকার জানায়, আমার এই ড্রাগনের বাগানে প্রশিক্ষিত ১৫ পুরুষ ও ১৫ নারী শ্রমিক রয়েছে। যারা এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
তবে এই ড্রাগন চাষে নিজে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে চান বলে নাসির সরকার জানান ।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, “অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। নাছির উদ্দীন সরকারের বাগানে ১৪ মাসে ফল এসেছে । তিনি এখানে প্রথম এই ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে আগ্রহী হবেন। তাছাড়া “পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে।
কয়েক বছর আগে থেকেই পারিবারিক ভাবে কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছে।
প্রতি বছর ফলের পরিমান ও আয় বাড়তে থাকে।
সামান্য পরিচর্যায় এই ফল চাষ করা যায়।
ছবি ক্যাপশনঃ মতলব উত্তর উপজেলায় নাসির উদ্দিন সরকারের ড্রাগনের বাগান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT