49 বার পঠিত
ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ পাসপোর্ট করার হিড়িক, হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ, বিগত দিনের তুলনায় ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদফতরের সবচেয়ে বেশি মানুষ পাসপোর্ট করতে এসেছেন। প্রতিদিন শত-শত মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। এর আগে একসঙ্গে এতো মানুষের ভিড় পাসপোর্ট অধিদফতরের কখনই দেখা যায়নি। অতিরিক্ত এই সংখ্যক গ্রাহক চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।
চলতি আগস্ট মাসের গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের সামনের ও রাস্তায় দেখা যায় অস্বাভাবিক রকমের ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট করার জন্য। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বয়স্ক নারী-পুরুষ, থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীরা।
এর আগে ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পড়লেও বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক সাপ্তাহ পর থেকেই এর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচগুণের বেশি। আবেদনের কাগজপত্র জমা নিলেও একই দিন ছবি তোলা কিংবা আগুলের ছাঁপ নিতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা প্রত্যাশীরা।
পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তার তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে পাসপোর্ট আবেদন বাবদ মাসে প্রায় দেড় কোটি রাজস্ব আয় হলেও বর্তমানে বেড়েছে এর পরিমাণ।
নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। এতে করে নতুন করে ছবি তোলা, আইরিশ নেওয়া এবং স্বাক্ষর করার কাজ করতে হচ্ছে অপারেটরদের। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ-সাত মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরণের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও বড় ধরণের সংকট তৈরি করছে। আর হঠাৎ করে অধিক সংখ্যক গ্রাহক পাসপোর্ট করতে আসায় তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
পাসপোর্ট করতে আসা রূপসী বলেন, সামনে পূজা আর দেশের এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু পাসপোর্ট করতে পারব কিনা বলতে পারছি না। লাইন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
হরিপুর উপজেলা থেকে আসা দীলিপ জানান, সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সকাল থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন আবেদন জমা দিতে পারব কে জানে।
শুধু দীলপ নয়। তার মতো আরও সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গৌতম নামে এক ছাত্র বলেন, আমাদের মধ্যে খুব বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার জন্য সবাই পাসপোর্ট করতে এসেছি। পাসপোর্ট করে আমি ভারতে গিয়ে পড়াশোনা করবো। এছাড়া অনেকেই বলছেন চিকিৎসার জন্য, কেউ বলছেন তীর্থে যাবে আবার কেউবা বলছেন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছেন।
এবিষয়ে সমাজ উন্নয়নকর্মী মনিরুজ্জামান মিলন জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও হামলা করা হয় এবং অনেকে হামলা শিকার হন। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধরণের কোনো সমস্যা বা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরণের ভয়-ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যে কারণে আগের তুলনায় বর্তমানে ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মানুষ পাসপোর্ট করছেন।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রুকুনুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি আবেদন জমা হতো। আর এখন প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টিরও বেশি পাসপোর্টের আবেদন জমা হয়। হঠাৎ করেই অতিরিক্ত সেবাগ্রহীতা আসায় আমাদের যে পরিমাণ জনবল আছে, সে অনুযায়ী আমাদের পক্ষে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই আমরা রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় কাজ করে গ্রহীতাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।