110 বার পঠিত
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর আশপাশের কয়েকটি গ্রামে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরশহর ও সাবরাং কেঁপে উঠছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান এসব এলাকার অন্তত ১২ হাজার মানুষ।
সীমান্তের লোকজনের ভাষ্য, তিন দিন গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে নতুন করে শুরু হয় গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ। তবে গত দুই রাতে (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) লড়াইয়ের তীব্রতা আগের তুলনায় বেশি অনুভূত হয়েছে। বিমান হামলা বাড়ানোর পাশাপাশি আকাশ থেকে ছোড়া মর্টার শেলের বিকট শব্দও ঘনঘন কানে বাজছে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, এক মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চললেও গত দুই দিন তার তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে মনে হচ্ছে। তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরিত মর্টারশেলের বিকট শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। সীমান্ত এলাকার হাজারো মানুষ খেতখামারে যেতে পারছেন না। অনেক এলাকায় চিংড়ি-কাঁকড়া, সবজি ও ধান চাষ বন্ধ আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দিনের চেয়ে রাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ বেশি ঘটছে জানিয়ে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোয় ২০ থেকে ২৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আগের দিন বৃহস্পতিবারও ১০ থেকে ১৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজন শুনতে পান। মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, পেরাপ্রুসহ কয়েকটি এলাকাতে সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধারের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। তাতে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম হচ্ছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ জালাল বলেন, মর্টার শেলের বিকট শব্দে তাঁর এলাকায় কম্পন অনুভূত হচ্ছে। রাতের বেলায় ঘনঘন কম্পনে শিশুদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, অনেকে ভয়ে কান্নাকাটি করছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফ নদীর বুকে জেগে ওঠা তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এখন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইনে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের মানুষ তিন দিন ধরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানিয়ে ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, এখন যেখানে যুদ্ধ চলছে, তা ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এ কারণে গুলির শব্দ এপারে আসছে না।
উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আরাকান আর্মি মংডু শহরের তিন দিক ঘিরে রেখেছে। এখন তারা মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও অবস্থান ধরে রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। ফলে চলমান সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ–২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে বিজিবি।