159 বার পঠিত
ঝালকাঠি প্রতিনিধি> ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থীতা চুরান্তকরণে দলীয় হাইকমান্ড এখনো চুরান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইজন প্রার্থীকে প্রস্তুত রাখতে গিয়ে এক সমিকরন সামনে এসে দাড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে খান সাইফুল্লাহ পনিরকে নিয়েই ভাবনায় পরেছে। পনিরকে ভাবা হচ্ছিল জেলা পরিষদের মনোনয়ন দেয়ার। কিন্তু সেই সমিকরনে জাতীয় নির্বাচনে পনিরকে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুত রাখতে গিয়ে আপাতত জেলা কমিটির এই শীর্ষ নেতাকে জেলা পরিষদের মনোনয়ন না দেয়ার এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
দলীয় হাইকমান্ডের একাধিক নেতা নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, ‘আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন বোর্ডের অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এ বিষয়ে চুরান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত মো. ফায়জুর রব আজাদের নামটি তালিকার সামনে রাখা হয়েছে। যদিও দলের বিভাগীয় সাংগঠিক টিম ও বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য মো. ফয়জুর রব আজাদ ও খান সাইফুল্লাহ পনিরকে সার্বিক বিবেচনায় প্রার্থী করা যেতে পারে বলে মতামত দেয়া হয়েছে।
এদিকে মনোনয় ফরম বিক্রির কার্যক্রম রোববার শুরু হলেও আলচ্য এ দুই প্রার্থী এখনো মনোনয়ন সংগ্রহ করেন নি। তবে গুঞ্জন শোনা গেছে প্রতিদ্বনন্দ্বীতায় থাকা আরও ৪ প্রার্থী পনির ও আজাদের দিকে তাকিয়ে থাকায় তারাও মনোনয়ন ফরম ক্রয় থেকে বিরত থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন।
তবে একটি নির্বরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় রাজনীতিতে পনির চাপের মধ্যে পরেছে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে থাকা কোন এক প্রভাবশালী নেতা চাচ্ছেন পনির জেলা পরিষদের প্রার্থী হোক। পনির প্রার্থী হলে তার মনোনয়ন চুরান্ত এমন আভাসে ওই প্রভাবশালী নেতা হাফ ছেড়ে বাচেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে তার পথের কাটা দূরিভূত হওয়ার ভাবনায়। কারন পনিরই হচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনে তার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দলীয় হাইকমান্ড তাকে প্রস্তুতি নিতে সংকেত দিয়ে রেখেছে। এ নিয়ে পনিরের ওপর ওই নেতা নাখোশ হওয়ায় তিনি চাচ্ছেন না স্থানীয় রাজনীতি টিকে থাকার সমিকরনে প্রভাবশালী ওই নেতা তাকে চেপে ধরুক।
ধারণা পাওয়া গেছে, নিজেকে রক্ষায় পনির শেষমেষ দুই এক দিনের মধ্যে মনোনয়ন কিনতে পারেন অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক সরদার মো. শাহ আলম তিনিও মনোনয়নপত্র কিনতে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আছেন।
পনিরের সাথে শাহ আলমের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছেনা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে শাহ আলমের নারী কেলেঙ্কারির পেছনে পনিরের হাত রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ওই নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে তৎকালিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আলম সামাজিকভাবে চরম বিপর্যিত। কেন্দ্রীয় একটি সূত্র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকতা জানিয়ে বলেন, ‘৮ টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম ৬১ টি জেলার চেয়ারম্যান প্রর্থীদের নাম চুরান্ত করার ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম রাখেননি। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বে থাকা দলের সম্পদকমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাগঠনিক সম্পাদকরা জেলা পর্যায় থেকে নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিটি জেলার জন্য কমপক্ষে দুইজন নেতার নামের সমন্বয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়েছেন।
জানা গেছে সে তালিকায় সরদার শাহ আলমের নাম নেই। এবার যদিও আরও ৩ প্রার্থী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান, ব্যাবসায়ী সালাহউদ্দিন আহম্মেদ সালেক,নলছিটি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিকে মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছে।
কিন্তু আলোচনায় রয়েছেন পনির, আজাদ ও শাহ আলম। বিশেষ করে পনিরকে নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির ঘোরপ্যাচে খান সাইফুল্লাহ পনির আলোচনায় থাকলেও শেসমেষ কি ঘটে তা দেখার একধরনের চমক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নিরবে ফয়জুর রব আজাদ প্রচারনার পাশাপাশি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলেন জানা গেছে।
ঢাকার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আজাদের রাজনৈতিক ইতিহাস-ইতিবৃত্তে ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড তার উপর অনেকটা সন্তুষ্ট। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মো. ফায়জুর রব আজাদকে চুরান্ত প্রার্থী হিসেবে ভাবা যায় কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ চলছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাশকাঠি গ্রামের পীরের বাড়ির সন্তান ও ঝালকাঠি-১ আসনের সাংসদ বজলুল হক হারুন হচ্ছেন আজাদের বড় ভাই। পীর বাড়ির সন্তান হিসেবে তাদের পরিচয় থাকায় এলাকায় যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে, তেমন দলের মধ্যে কোন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না থাকার বিষয়টি ফায়জুর রব আজাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসবে দাড়িয়েছ।
তাছাড়া ঢাকায় তাদের শক্ত লবিং থাকায় আজাদের নামটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলদাভাবে পৌছানো হয়েছে। আজাদও অনেকটা নির্ভর যোগ্যতার আলোকে জেলার অপরাপর প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক এবং রাজনীতির কুটচাল থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সচ্ছতা আনতে আজাদকে শেষমেষ দলীয় মনোনয়ন দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
স্থানীয় একাধিক সূত্র এমনটি জানিয়ে বলেন, আজাদের পক্ষে এক ধরনের নিরব গণ জোয়ার সৃষ্টি হলেও কেন্দ্রীয় ওই প্রভাবশালী নেতার কারনে কেউ মুখ খুলছে না। তবে শেষান্তে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন তা সম্ভবত ১০ সেপ্টেম্বর চুরান্ত ঘোষণা আসতে পারে। কারন ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ক্রয়ের শেষ দিন। এখন এনিয়েই ঝালকাঠির রাজনীতি সরগরম।