জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের উদ্যোগে প্রয়াত শিক্ষক, কথাসাহিত্যিক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইফতেখার মাহমুদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় আইন অনুষদের ৪১১ নং কক্ষে এই স্মরণসভা আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তামান্না আজিজ তুলি, প্রয়াত শিক্ষক ইফতেখার মাহমুদের বন্ধু ও সহকর্মী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, মাহফুজ বিন ইউসুফসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
স্মরণসভায় বক্তারা ইফতেখার মাহমুদের জীবন, কর্ম, মেধা ও মানবিক গুণাবলির স্মৃতিচারণ করেন।
ইফতেখার মাহমুদের শিক্ষা ও আদর্শে প্রভাবিত আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. তারেক বলেন, স্যার শুধু শিক্ষক নন, আমাদের কাছে তিনি চিন্তার আলো ছড়ানো এক পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর ক্লাসে আইনকে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয়, বরং যুক্তি ও ন্যায়বোধের বিষয় হিসেবে শিখেছি।
ইফতেখার মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী বলেন, প্রিয় বন্ধু ইফতেখার মাহমুদের চিরবিদায়। গত এক বছর ব্রেইন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তিনি পরাজিত হলেন। আইন পড়ানো, আইন ও সাহিত্যের বই লেখা, বিভিন্ন বিষয়ে পাবলিক লেকচার—এসবের মাধ্যমে তিনি দেশের আইন অঙ্গনে, মিডিয়ায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন সুবক্তা ও দক্ষ লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রবল মেধাবী ইফতেখার বিসিএস ক্যাডার হয়েও সাহিত্য ও শিক্ষকতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ক্লেদাক্ত এই ঢাকা শহরে থেকেও তিনি নির্মল ও সৃজনশীল জীবন গড়ে তুলেছিলেন।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক ইফতেখার মাহমুদ স্যার ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ জ্ঞানসাধক। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন এবং পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন।
স্মরণসভায় প্রয়াত ইফতেখার মাহমুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ইফতেখার মাহমুদ শুধু একাডেমিক পরিমণ্ডলে নন, সাহিত্য ও চিন্তার জগতে এক সতেজ বাতাস ছিলেন। তাঁর চিন্তা, গবেষণা ও লেখালেখি তরুণ আইনবিদদের জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে। শিক্ষকতায় তাঁর নিবেদন আমাদের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ।”
স্মরণসভার শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। বক্তারা বলেন, ইফতেখার মাহমুদের অভাব পূরণ হওয়ার নয়—তিনি তার কর্ম, সততা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রসঙ্গত, বিসিএস ক্যাডার হয়েও প্রশাসনিক চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন ইফতেখার মাহমুদ। তিনি গত ৩০ অক্টোবর ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি ‘কথা আর গল্পের জীবন’, ‘হে দিগ্বিদিক হে অদৃশ’, ‘শিকড়ে শাখায় মেঘে’, ‘হুমায়ূন আহমেদের ভঙ্গুর ও ভঙ্গুরতা’, ‘কথা কাগজে’ ও ‘অনুপস্থিত’—সহ একাধিক বইয়ের লেখক ছিলেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।