বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৫ জানুয়ারি ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপাচার্য জানান, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব চলাকালে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা ও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার, ৩৩ শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার ও ১৫ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর একজন শিক্ষার্থী নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তার অভিযোগ তুলে নেয়া হয়।
সম্প্রতি ইংরেজি বিভাগ বরাবর প্রশাসন থেকে একটি চিঠি আসে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, মো. জিহাদুল্লাহ ও তপন চৌধুরী গত জুলাই-আগষ্টে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সম্পৃক্ততার উপর ভিত্তি করে তাদের শাস্তি স্বরূপ গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ থেকে সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ সালের স্বাক্ষরিত চিঠি ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ সালে বিভাগীয় প্রধান স্যারের কাছে পৌছায়।
তবে ৮ আগস্ট, ২০২৪ এরপর থেকে অভিযুক্ত তপন ও জিহাদ সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে এবং ফাইনাল পরিক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে বিভাগের করনীয় কী এবং তাদের কত সেমিস্টার একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে থাকবে তা স্পষ্ট করে চিঠিতে বলা হয়নি। তারা কোন সেশনের শিক্ষার্থীদের সাথে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করবে সেটাও উল্লেখ্য করা হয়নি। যেহেতু ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা হবে কি না তা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগটি। বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ১৪তম ব্যাচের সকল পরিক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইংরেজি বিভাগ।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, "আমাদের ব্যাচের অভিযুক্তদের শাস্তির মাত্রা যাই হোক না কেন ওরা তো আমাদের সাথে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না, তাহলে আমাদের ব্যাচের পরীক্ষা কেন নেওয়া হচ্ছে না। এখানে আমাদের একটা প্রশ্ন আছে , আমাদের ব্যাচের অভিযুক্তরা যে আমাদের সাথে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না সেই সিদ্ধান্ত কে নিবে? আমাদের বিভাগ নাকি প্রশাসন? উত্তর হলো প্রশাসন। কিন্তু সেই প্রশাসনই কোন অগ্রগতি দেখাচ্ছে না।"
তারা আরও বলেন, "এমতাবস্থায় আর চুপ করে বসে থাকার সময় নেই। এইদিকে আমাদের ক্যাম্পাসের সমন্বয়কদের এবং শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে (অভিযুক্তদের শাস্তির মাত্রা ও ধরন বিষয়ে) আগের নির্ধারিত সিধান্ত আপাতত স্থগিত আছে। যদি নতুন করে সিধান্ত নেওয়া হয় তাহলে বিষয়টা আরো জঠিল হবে। আমরা কোন অভিযুক্তদের জন্য নিজের পড়াশুনার ক্ষতি করতে চাই না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আসিফ আল মতিন বলেন, 'প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছি এবং তারা খুব শীঘ্রই এই বিষয়টি স্পষ্ট করে জানাতে চেয়েছেন। আমাদের পরিক্ষার প্রশ্নপত্র, রুটিনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে। শিক্ষার্থীদের ফর্মফিলাপের জন্যে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসন থেকে নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা পেলেই আমরা আমাদের করণীয় সম্পন্ন করে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত করে ফেলব।'
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT