160 বার পঠিত
বসন্তকে রাঙাতে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে শিমুল-পলাশ ফুলের লালের মূর্ছনায় সখ্যতা গড়ে তুলে শ্বেত-শুভ্রতায় মুগ্ধতা ছড়াছে ভাঁট বা ভাইট ফুল।
অঞ্চল বিশেষ নামের ভিন্নতা থাকলেও এ উপজেলায় ভাইট ফুল নামে পরিচিত।ভাইট ফুল গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত বুনো ফুল।এ ফুলে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মুখ কবিতায় লিখেছেন,ভাঁট আশঁ শ্যাওড়া বন বাতাসে কি কথা কয় বুঝি নাকো,বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে,পৃথিবীর কোন পথে দেখি নাই হায়,এমন বিজন পথের ধারে দু প্রান্তে প্রকৃতিকভাবে জন্ম গ্রহন করে থাকে।ভাঁট বা ভাইট ফুল নিয়ে কবির এমন বর্ণনার বাস্তবতায় সরেজমিনে দেখা যায়,বসন্তের আগমনে এ উপজেলার পথের দুই ধারে,পুকুর পাড়ে,ঝোপঝাড়ে,কবরস্থান,শ্মশানসহ নানা পরিত্যক্ত জায়গায় ভাইট উদ্ভিদ প্রকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে শ্বেত-শুভ্রতায় ফুটেছে থোকা থোকা ফুল।অনেকটা নীরবে বিলিয়ে দিচ্ছে সৌন্দর্য।
¯িœগ্ধ শোভার সুরভিত ফুলের রুপ সুধায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে অনেক পাখি ও পতঙ্গ।ভাইট ফুলের নয়নাভিরাম শুভ্রতায় পুলকিত হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মন।উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আজিজার রহমান বলেন,াভাইট উদ্ভিদ অবহেলায় ও অযন্তে চাষ ছাড়াই প্রকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে।এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুম্পক উদ্ভিদ।বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত ফুল ফুটে।ফুলটির নির্মানশৈলি নানা কারুকাজে ভরা।এ ফুলের পুংকেশর,পাপড়ি,পাতা ও কান্ডকে প্রকৃতি নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছে।ফুলের পুংকেশরই এ ফুলের প্রধান সৌন্দর্য।
সাদা রঙের এ ফুলে রয়েছে পাঁচটি পাপড়ি।প্রতিটি ফুলের অভ্যন্তরে বেগুনি রঙের ঢেউ ফুলটিকে করেছে আরো আকর্ষণীয়।উপজেলার আয়ুব্বেদ চিকিৎসক সুধীর চন্দ্র বলেন,ভাইট উদ্ভিদ প্রকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও তোতো হওয়ায় রয়েছে অনেক ভেষজ গুনাগুন।বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়।অনেকে কৃমি দুর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন।চর্মরোগে নিয়মিত ফুলের রস মালিশ করলে উপশম মেলে।
পাতার রস গ্যাস নিমূলসহ ছোটদের মুখে অরুচি,পেট ফাপা ও জ্বর সারাতে কার্যকরি। গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাইট পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়।বসন্ত শেষে ভাইট গাছের ঝোপঝাড় কেটে গ্রামের দরিদ্র পরিবার গুলো লাকড়ি হিসেবে রান্নার জ্বালানির চাহিদা মেটায়।সর্বোপরি আগের লোকজন পাতা ও ফুলের ভেষজ গুনাগুন জেনে এসব চিকিৎসা করতো।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমান প্রজন্ম এর ভেষজ গুনাগুন জানেনা।পাশাপাশি আগে সব জায়গায় ভাইট গাছ দেখা যেত।এখন বসতবাড়িসহ ফসলি জমি বেড়ে যাওয়ায় ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে।কীটনাশক প্রয়োগ করে নিধন করা হচ্ছে বন-জঙ্গল।এ ছাড়াও প্রতি বছর রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও বর্ধিত করণে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ।
এতে অনেকাংশে এ উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে উজার হয়ে যাচ্ছে।তাই ওষুধিগুনাগুন ও বুনো সৌন্দর্য উপভোগে ভাইট ফুল রক্ষা করা জরুরি।