কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি>গ্রাম-বাংলার অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় সবজি ঝিঙে।সবজির পাশাপাশি ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতে ঝিঙে ফুলের জুড়ি নেই।নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে এ সবজির চাষ মূল জমিতে নয়।
বাড়তি (ফাও)আবাদ হিসেবে বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে আদা ক্ষেতের বেড়ায়,সড়কের ধারে,জমির সিমানা আইলে বাঁশের কঞ্চি,আগালিতে,বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে,মাচা পদ্ধতিতে।সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,কৃষকের ওই সব ক্ষেতে ক্ষেতে লাগানো লতানো ঝিঙে গাছের কচি সবুজ পাতা ছেয়ে গেছে শাখা-প্রশাখা।
পাতার ফাঁকে ফাঁকে হলুদ রঙের ফুল ফুটে প্রাণ-প্রকৃতিকে মাতোয়ারা করে তুলেছে।সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি।গাঢ় হলুদ ফুলের পাপড়ির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ও পথিক।বাতাসে দোল খাওয়া ফুলগুলো মনোমুগ্ধ সৌন্দর্য উপভোগের আমন্ত্রণ জানিয়ে কাছে ডাকছে ফুলপ্রেমীদের।
এ ডাকে সারা দিয়ে কিশোরী ও তরুণীরা নিজেদের সৌন্দর্য বাড়াতে খোপায় ও বেনিতে পড়ছেন।কোমলমতি শিশুরাও ঝড়া ফুল তুলে এনে খেলা করছে।মনের আনন্দে ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি ও প্রজাপতির দল।এ ফুল বিকেলে ফুটে।গোধুলীর রঙ ফুলের উপর পরার পর দুর থেকে দেখলে মনে হয় যেন অজুত-কোটি,নিযুত হলুদ তারকা চমকাচ্ছে।তখন বিমোহিত না হয়ে পারা যায়না।হলুদ বরণী এ ফুলের প্রস্ফুটন এটাই নয়নাভিরাম যা এর রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ হয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঝিঙে ফুল কবিতায় লিখেছেন,ঝিঙে ফুল!ঝিঙে ফুল!সবুজ পাতার দেশে,ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-ঝিঙে ফুল।
গুল্মে পর্ণ লতিকার কর্ণে ঢল ঢল স্বর্ণে ঝলমল দোলে দুল-ঝিঙে ফুল।পাতার দেশের পাখি বাধাঁ হিয়া বোটাঁতে,গান তব শুনি সাঁজে তব ফুটে ওঠাতে।প্রজাপতি ডেকে যায়-বোঁটা ছিড়ে চলে আয়…।কবি এভাবেই নানা ছন্দ কবিতায় গ্রামবাংলার মন মুগ্ধতায় ফুটে তুলেছেন ঝিঙে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে কথা।দেখা যায়,উপজেলার উত্তর দুরাকুটি পশ্চিম পাড়া গ্রামের চাষী শামসুল হকের আদা ক্ষেতের বেড়ায়,সবুজের মিতালিতে পাল্লা দিয়ে ফুটেছে অগণিত ঝিঙে ফুল।
আর ফুটে থাকা এসব ফুলের সৌন্দর্য় প্রকৃতিতে যেন যোগ করেছে নতুন মাত্রা।সেই সাথে বেড়ার চারিপাশে ঝুলে আছে ওই কৃষকের স্বপ্নের অসংখ্য কচি ঝিঙে।কৃষক শামসুল বলেন,ঝিঙে ফুল দেখতে খুবই সুন্দর।
এ ফুলের পাপড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে।শুধু ফুলে সৌন্দর্যে মুগ্ধ নয়,কচি সবজি রোজ দিন পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে।এর চাষাবাদে বীজ বাবদ খরচ হয় ২০টাকা।জ্যৈষ্ঠ্য মাসে ৩০ শতাংশ জমিতে রোপনকৃত আদা ক্ষেতের আইলে ঝিঙে বীজ লাগানো হয়।
পরবর্তীতে বেয়ে উঠা লতানো গাছ বেড়ায় তুলে দেয়া হয়।এর পর পুরো বেড়ায় শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।প্রতিটি ডগায় ডগায় ফুল ধরে কচি ঝিঙে হয়।উচ্চফলনশীল হওয়ায়,সপ্তাহে ২থেকে ৩ বার,৮ থেকে ১০ কেজি সবজি উত্তোলন করা যায়।বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে ৩শ থেকে ৪শ টাকা আয় হয়।ফলন পাওয়া যায় ৪ মাস।পরিচর্যা লাগেনা।
পোকা-মাকড়ের বালাই না থাকায় কীটনাশক স্প্রে দরকার হয়না।এতে বিষমুক্ত সবজি ও ফুলে ফুলে মৌমাছি-প্রজাপতির অবাধ বিচরণ দেখা যায়।নিতাই বাড়িমধুর গ্রামের কৃষক হাসেম আলী ৩ বিঘা আদা লাগানো ক্ষেতের বেড়ায় ঝিঙে চাষ করেছেন।
তিনি জানান,বাড়তি খরচ ছাড়াই সাথী বা ফাও আবাদ হিসেবে ঝিঙে অধিক লাভজনক সবজি।বেড়ায় লাগিয়ে প্রতি সপ্তাহে ঝিঙে বিক্রি করে হাজারের মত টাকা সাংসারে বাড়তি আয় হচ্ছে।আর ফুলে ফুলে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি সাজাতে ঝিঙে ফুলের জুড়ি নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন,নানাভাবে সাথী ও বাড়তি ফসল হিসেবে ঝিঙে চাষ করে কৃষকেরা পারিবারিক ও স্থানীয় সবজির চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন শহরে রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।পাশাপাশি কৃষকের ক্ষেতে ক্ষেতে ফুটে থাকা হলুদ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে প্রশান্তির বন্যা বয়ে দিচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT