163 বার পঠিত
দেশের অন্যাঞ্চলের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষিতে কমছে ক্ষেত মজুর,বাড়ছে মজুরি।সেই সাথে বেড়েছে আনুষঙ্গিক উৎপাদন ব্যয়ও।সব মিলে ফসল উৎপাদন ব্যয় মিটাতে গিয়ে কৃষককে লোকসান গুনতে হয়।
বিশেষ করে ধান রোপণ,কর্তন মৌসুমে ক্ষেত মজুরের তীব্র সংকট দেখা দেয়।এ অবস্থায় কৃষক সঠিক সময়ে ধান রোপণ,ঘরে তোলা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন।এসব সংকট মোকাবেলায় সময়,শ্রমিক ও উৎপাদন খরচ সাশ্রয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সমলয়ে ইরি-বোরো চাষাবাদ স্কিম।সমলয় সমবায় ভিত্তিক একটি যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি।যা একই ব্লকে বড় পরিসরে যন্ত্রের চাষাবাদ।এ ব্লকে এক যোগে উন্নত প্রযুক্তির ট্রে-তে একই ধান বীজ বপন ও রোপণ,কর্তন হবে যন্ত্রের মাধ্যমে।
এতে শ্রমিক সংকট নিরসন,অর্থ,সময় সাশ্রয় হওয়ায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।গত বছর সমলয়ে বিস্ময়কর সফলতায় এবার বৃহৎ পরিসরে হচ্ছে এর চাষ।এর আওতায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধমে ধানের চারা রোপণে মহোৎসব চলছে।জানা যায়,চলতি বছর ১১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৭ হাজার ১৮৩,উফশী ৪ হাজার ২ হেক্টর।বোরো আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে ৬ হাজার ১০০ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষককে কৃষি প্রণোদনার সার,বীজ সহায়তা দেয়া হয়।আর টেকসই যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে কৃষিকে যুগোপযোগী ও লাভজনক করতে নিরলস ভাবে কাজ করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
এ লক্ষে গতবার ১৫০বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে ঈর্শনীয় সফলতা অর্জিত হলে,চলতি মৌসুমে ওই বিভাগের নিজস্ব উদ্যোগে সাড়ে ১৩ হাজার ট্রে-তে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের চারা তৈরি করে সাড়ে ৪০০কৃষক ৮০০বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করছে।
রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,বাহাগিলী বসুনিয়া পাড়া ব্লকে২০০ বিঘা,কেল্লা বাড়িতে ১১০বিঘা,রনচন্ডি দক্ষিণ পাড়ায়১৩০ বিঘা,চাঁদখানা পাড়ের হাটে ৭০বিঘা,মাগুড়া মৌলভীর হাটে ৪৯ বিঘাসহ অন্যান্য ইউনিয়নের ব্লকে যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের চারা রোপণে মহোৎসব চলছে।এ সময় বাহাগিলী বসুনিয়া পাড়া ব্লকের কৃষক আজহারুল ইসলাম ও মাগুড়া মৌলভীর হাটের মহিউদ্দিন বলেন,কৃষি অফিসের উদ্যোগে আমরা একই এলাকার কৃষক একযোগে ট্রে পদ্ধতিতে চারা তৈরি করে,রাইস ট্রান্সপ্লাটার যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করছি।
আগে ১২জন শ্রমিক দিয়ে ৩ বিঘা জমিতে সারা দিন লাগত।এখন এতে সময় লাগছে ১ঘন্টা।সমান দুরত্বে সারি বদ্ধভাবে চারা লাগানো যাচ্ছে।চারা ও জমির অপয় রোধ হচ্ছে।এতে ফলনও বৃদ্ধি পাবে।এর পর যন্ত্রের মাধ্যমে একযোগে ধান কাটতে পারব।এতে আমাদের সময় ও খরচ কমবে।শ্রমিক সংকট নিয়ে কোন চিন্তা থাকবেনা।
কৃষি অফিসারের সার্বিক পরামর্শ ও বীজ,সার সহায়তা পেয়ে এভাবে ধান চাষ করতে পেরে আমরা খুশি।উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন,সনাতন পদ্ধতিতে বীজ তলা থেকে রোপণ করতে বিঘায় খরচ পড়ত ২ হাজার টাকা।যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করায় খরচ হচ্ছে ৮০০টাকা।অপর দিকে কৃষি শ্রমিকের সংকটে বেড়েছে মজুরি।
এতে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষককে লোকসান গুনতে হয়।সময় মত ফসলও ঘরে তুলতে পারেনা।তাই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে শ্রমিক সংকট নিরসনসহ সময় ,শ্রম,ব্যয় কমিয়ে ধান চাষ লাভজনক করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।সব কিছু সাশ্রয়ে বিঘায় ৪০মনের উপরে ফলন পেয়ে কৃষকরাও লাভবান হবেন।এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে যা আগামিতে আরো বেগবান করা হবে।