নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। বেকার সময় পার করছেন জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই। মৌসুমের শুরু থেকে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় অনেকে হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্ত। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করচে তাঁহারা।
নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার প্রায় এক লাখ জেলের সবার। সরকারী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে হাতিয়া উপজেলার জন্য ৩০০ টন চাল। বরাদ্দ দেওয়া হয়; যা ২৫ কেজি করে ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১২ হাজার জেলের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় এই বরাদ্দ অনেক কম বলে জানান জেলেরা।
হাতিয়ার উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কালিরচর সুউজের ঘাট। এখানে ছোট- বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। গতকাল কথা হয় এ ঘাটের ট্রলারের মালিক ও মুদিদোকানি মো. হাসানের সঙ্গে। হাসান জানান, এই ঘাটে
মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত জেলে ও ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১০ হাজার লোক। এই বছর মৌসুমের প্রথম থেকে মাছ না পাওয়ায় কারও অস্তিত্ব নেই। অনেক মাঝিমাল্লা জানসহ ট্রলার ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন। অনেক ট্রলার মালিক হিসাব না দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২ নভেম্বর এরপর আর মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, একই ঘাটে। জাল বোনার কাজ ব্যস্ত সময় পার করছে কালিরচর গ্রামের শেমল মাঝির ট্রলারের মাঝিমাল্লারা। কথা হয় শেমল মাঝির সঙ্গে। তিনি জানান, এই ট্রলারের মালিক ও মাঝি নিজেই। এ বছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় যে চাল দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁর ট্রলারের ১৮ জন জেলের মধ্যে দুজন পেয়েছে। এই চাল পেতে দুজনকে জাল বোনার কাজ ফেলে রেখে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। দিন শেষে পাওয়া ২৫ কেজি চালের মূল্য হিসাব করলে অনেক নগণ্য। বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুল ইসলাম জানান, বুড়িরচর হাতিয়ার সবচেয়ে বড় দুটি
ইউনিয়নের মধ্যে একটি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এই ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। অথচ এই ইউনিয়নে ছয়টি ঘাটে জেলে আছেন ১০ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলে আছে ৩ হাজার ৬০০। এ বছর নদীতে মাছ না পেয়ে অনেক জেলে ও ট্রলার মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল বলেন, হাতিয়াতে ৪১টি ঘাটে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা রয়েছে। এসব নৌকায় ১০ জন করে হলেও লাখ লোক এই পেশার সঙ্গে জড়িত।
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজু চৌধুরী বলেন, 'উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় জেলেদের সংখ্যা অনুপাতে নিজ নিজ ইউনিয়নে এই বরাদ্দ বিভাজন করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে এই চাল বিতরণ শেষ হয়েছে। তবে হাতিয়াতে জেলের সংখ্যা অন্যকে বেশি। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই বছর গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কিছুটা বেশি। দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আরিফ খান
Developed by Shafayet IT