22 বার পঠিত
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ নানা আয়োজনে পালিত হলো হাতিয়া গণ হত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাখি ডাকা ভোরে পাক বাহিনী কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে হাতিয়া অপারেশন নামে এক পৈশাচিক বরবরতা চালিয়ে আগুন দিয়ে ভষ্মীভূত করে দিয়েছিলো পুরো এলাকা। এরপর ৬’শ ৯৭জন নিরীহ মানুষকে দাগারকুঠি নামক স্থানে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করিয়ে পাখির মত গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে।
পাক বাহিনীর অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকান্ড থেকে কোলের শিশু পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। অনেক শিশুকে পাক সেনারা ধরে আছাড় মেরে অথবা আগুনে নিক্ষেপ করে জঘন্যতম বর্বতার মাধ্যমে হত্যা করতে ছাড়েনি। সেদিন এ ভাবেই হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া,অনন্তপুর,রামখানা,নয়াডারা ও দাগারকুঠি গ্রামসহ পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে যাকে যে অবস্থায় পেয়েছে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ অপারেশন শুধু হাতিয়া ইউনিয়নেই নয়,পাশ্ববর্তী বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কলাকাটা,জলাঙ্গারকুঠি,ফকির মোহাম্মদসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে একই সাথে হামলা চালানো হয়েছে।
সেদিন পাক সেনাদের গুলি খেয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন এমন ব্যক্তির মধ্যে আজো বেঁছে আছেন অনেকে। সে দিনের সেই হত্যাকান্ডের কথা জিজ্ঞাসা করলে আজো তারা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। হাতিয়া অপারেশনে পাক বাহিনীর গুলিতে এই ৫ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের কোন না কোন স্বজন নিহত হয়েছেন।
সে দিনের পাক বাহিনীর অপারেশনে এতোগুলো লোক দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দান করলো।সেই সব শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ১৯৯৭ সালে তৎক্ষনিকভাবে সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রথম দাগারকুঠিতে (যে স্থানে ৬৯৭ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল) স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়। সেই স্মতিস্তম্ভ আজ ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
এর পরবর্তী সময়ে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হলেও সেখান থেকে দৃষ্টি নন্দন করতে ২০১১ সালে এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থানান্তরিত করে বর্তমানে বাগুয়া-অনন্তপুর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পার্শে মোড়ে নির্মিত হয়েছে। পাক বর্বরতার শিকার ৬৯৭জন শহীদের আত্মা হয়তো আজো আহাজারি করে ব্রহ্মপুত্র নদের উপকুলীয় এলাকার গ্রামগুলোর আকাশে বাতাসে। ১৯৭১ সালে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড ‘হাতিয়া গণহত্যা’। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও নানা কর্মসুচীর মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্প স্তবক অর্পন, আলোচনা সভা,দোয়া মাহফিল। ফ্রেন্ডস ফেয়ার এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহার নেতৃত্বে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্প স্তবক অর্পণ করা হয়েছে। এছাড়াও হাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও হাতিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্প স্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মহফিলের আয়োজন করে।