ইতিহাস অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। যুগের পর যুগ কেটে যায়, তবুও ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিকৃতি হয় না। আর ইতিহাসের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাদুঘর, নিদর্শন শালা। অতীতের নিদর্শন, স্মৃতি বর্তমান সমাজে শিক্ষামূলক দিক তুলে ধরে। তৎকালীন সময়ের মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা সম্পর্কে জানতে পারি ইতিহাস থেকে। ঢাকা ছিল প্রাচীন বঙ্গ জনপদের মধ্যমণি। এই প্রাচীন অঞ্চলটির রয়েছে চমকপ্রদ ইতিহাস, লৌকিক ঐতিহ্য, ভিন্নতর সাসংস্কৃতিক সামাজিক উৎসব আর ক্রিয়াকর্ম। এখানে জন্মলাভ করেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি, যাদের সেবাকর্ম, শিল্পসাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞানচর্চা ও রাজনৈতিক দক্ষতায় ঢাকা হয়েছে সমৃদ্ধ।
আর এমন এক নিদর্শন ঢাকা কেন্দ্র। এটা পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কাছে মোহিনী মোহন দাস লেনে অবস্থিত। এর কাছেই অবস্থিত ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব ও লালকুঠি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মাওলা বখশ সরদার এটি প্রতিষ্ঠিত করেন। ঢাকা কেন্দ্র ভবন দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এবং নিচের তলাতে রয়েছে মাওলা বখশ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট চক্ষু হাসপাতাল। এখানে চোখের সকল রোগের চিকিৎসা করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম শহর ঢাকা। আর ঢাকা শহর সৃষ্টির পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে ঢাকা কেন্দ্রের বই। এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে ঢাকার জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত যত লেখক বই লিখেছেন। এটি মূলত ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চা প্রতিষ্ঠান। এখানে রয়েছে প্রদর্শনী কক্ষ এবং ঠাঁই পেয়েছে তৎকালীন সময়ের মানুষের ব্যবহার্য প্রাচীন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এছাড়া রয়েছে মাওলা বখশ সরদার পারিবারিক গ্যালারি, পঞ্চায়েত গ্যালারি, ঢাকা কেন্দ্র লাইব্রেরি, ঢাকা বিষয়ক বই বিক্রয় কেন্দ্র, কমরেড ওসমান গনি মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, সাহিত্যিক ও লেখক মুনতাসীর মামুন ঢাকা কর্ণার, ঢাকা কেন্দ্র প্রকাশনা কর্ণার, বিলকিছ বানু স্মৃতি মিলনায়তন, বিজয় চত্ত্বর, ফজলুল করিম তারা সংস্কৃতি চত্ত্বর, সুদৃশ্য বাগান, মিলি শিশু চত্ত্বর, পল্লী কবি জসীমউদ্দিন স্মৃতি চত্ত্বর ইত্যাদি। ঢাকা কেন্দ্র বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি প্রতি বৃহস্পতিবার। এখানে রয়েছে প্রদর্শনী গ্যালারি যেখানে কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদ্দিন, শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, আতাউল গনি ওসমানী, জীবনানন্দ দাশ সহ প্রমুখ ব্যক্তির ছবি। তার একপাশে আছে সুন্দর বাগান, যা দেখতে খুবই মুগ্ধকর। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে পুরুষ এবং মহিলাদের নামাজের স্থান। নাস্তা করার জন্য রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। যে কোনো দর্শনার্থী লাইব্রেরিতে বসে ঢাকা সম্পর্কিত বই পড়তে পারে। লাইব্রেরিতে বই পড়ার সময় তার নাম, পরিচয়, তারিখ ভ্রমণ বইতে লিখতে হয়। ঢাকা কেন্দ্র দর্শন শেষে দর্শনার্থী ভ্রমণ বইতে তার নিজস্ব মন্তব্য লিখতে পারেন।
ঢাকা কেন্দ্র কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন ঢাকা সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন করা,ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য মানুষের কাছে তুলে ধরা, গবেষণা ও চর্চা করা, ঢাকার বিলুপ্ত ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা, ঢাকা বিষয়ক গ্রন্থ ও দলিল পত্র সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ, ঢাকা বিষয়ক গ্রন্থ বিপণন, বিলকিস বানুর স্মৃতি মিলনায়তন সেবা, ঢাকা বিষয়ক আড্ডা, সংস্কৃতি চর্চা, প্রকৃতি এবং পরিবেশ বান্ধব সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সর্বোপরি, ঢাকা শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার বড় একটা ক্ষেত্র ঢাকা কেন্দ্র। মানুষের জ্ঞান অর্জনের সীমা নেই। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কাজের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে ঢাকা কেন্দ্রের মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম।