181 বার পঠিত
নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আজ রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পালিত হবে। মহাসমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে হরতালের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বিএনপির অভিযোগ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আইন শৃংখলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে। এ হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুগপথ আন্দোলনরত দলগুলো। জামায়াত পৃথক ভাবে আজ সারাদেশে হরতাল পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বিএনপির ডাকা হরতালেও বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
মালিক সমিতি বলছে, সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ব্যাপারে সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকার পরিবহন কোম্পানি, রুট মালিক সমিতি এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিন ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে।
এদিকে হরতালের নামে নৈরাজ্য করলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, হরতাল ডাকা ও পালন যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার তেমনি জনগণের হরতাল না মানাও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কেউ যদি হরতালে নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে পুলিশ সেটা কঠোর ভাবে দমন করবে।
এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার।
এছাড়াও হরতালকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে টহল দিতে শুরু করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১১টি প্লাটুনের সদস্যরা। রমনায় ১ প্লাটুন, মতিঝিলে ২ প্লাটুন, পল্টনে ২ প্লাটুন, বিচারপতির ভবনের সামনে ৪ প্লাটুন, সচিবালয়ের সামনে ২ প্লাটুনসহ মোট ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক যুবদল নেতা সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সংঘাতের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি কর্মীরা আওয়ামী লীগের কয়েকটি বাস ও পিকআপভ্যানে ভাঙচুরে করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে বিএনপি নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে।
সংঘর্ষ কাকরাইল মসজিদ থেকে পল্টন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় কাকরাইল পুলিশ বক্স ও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় কাকরাইল আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
এর আগে একই জায়গায় সকালে ২টি বাস ও কয়েকটি পিকআপে লাঠিসোঁটা নিয়ে ভাঙচুর করে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মীরা। এর আগে মৎস্য ভবন এলাকায়ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব গাড়ি রমনা থেকে কাকরাইল মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমের দিকে যাচ্ছিল। এতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের পোস্টার লাগানো হচ্ছিল। তবে গাড়ি ও পিকআপ কয়েকটিতে ভাঙচুর করে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এদিকে সকাল থেকেই শাপলা চত্বরের প্রতিটি রাস্তা বেরিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে আরামবাগ থেকে বেরিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগোতে থাকে জামায়াত নেতা–কর্মীরা। তবে শাপলা চত্বরের কাছাকাছি তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছে তারা। এদিকে আরামবাগে পুলিশের গুলিতে নওয়াব আলী শেখ নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেছে জামায়াত। তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।