191 বার পঠিত
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিক্ষা হলো শরীর, মন ও আত্নার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন। আর শিক্ষা অর্জনের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম করার সুযোগ পায়। গবেষণার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বাস্তব সম্মত শিক্ষালাভ করতে পারে। সাধারণত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় সম্মান প্রদান করে। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৫৮ সালে। উল্লেখ্য ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করা হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। ফলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা বাসা ভাড়া অথবা মেসে থেকে পড়াশোনা করে। তারা উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে। পুরান ঢাকায় জনবহুল এলাকায় প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে শিক্ষার্থীরা। তারা স্বল্প টাকায় একাধিক টিউশন করিয়ে পড়াশোনার খরচ চালায়।
শিক্ষা গ্রহণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো শিক্ষক। আর যারা শিক্ষা দেন তারা শিক্ষক। আর যারা শিক্ষকের নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণ করে তারা শিক্ষার্থী। সুতরাং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক ভাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এটি বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাবির শিক্ষার্থী বেশি শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত থাকে। আর তারা উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। তাদের কোনো আবাসন সংকট নেই। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ২০ ধরে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু তারা কেউ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে পারে নি। বরং প্রতি বছর আশ্বস্ত করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে চলে যান। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। প্রতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক মেধাবী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে। তাদের মধ্যে কেউ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়। কিন্তু আশানুরূপ ভাল রেজাল্ট করা স্বত্তেও নিজের অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ পায় না। কিন্তু তুলনামূলক কম ভাল রেজাল্ট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য শিক্ষক নিয়োগ হয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে।
তাই স্বনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। স্বনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যক্রমের ওপর জোর দেয় না, বরং তাদের সামগ্রিক বিকাশ ও সমাজে কার্যকরী ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত করে। নিজস্ব গবেষণা, প্রশিক্ষণ, কনসালটেন্সি, ও শিল্প সম্পর্কিত কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় অর্জন করে। তারা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের তহবিল বাড়ায়, যা তাদের আর্থিক নির্ভরতা কমায়। স্বনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। নিজেদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান তৈরি এবং তা শিক্ষাদানে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের জন্য উন্নত গবেষণা সুবিধা ও ল্যাবরেটরি প্রদান করে গবেষণার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যক্রম অফার করে, শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।
তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে, যাতে শিক্ষার্থীরা বহুমুখী দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এসব পাঠ্যক্রম সাধারণত শিল্প, ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশদভাবে আবৃত্তি করে। এছাড়া সমাজের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখে। তারা সমাজের প্রয়োজনীয়তা ও সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা ও প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সহায়তা করার মাধ্যমে তারা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে।বিশ্ববিদ্যালয় স্বনির্ভর হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ডিজিটাল লার্নিং, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, এবং স্মার্ট ক্যাম্পাসের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রদান করতে পারবে। শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে শক্তিশালী সহযোগিতা স্থাপন করে পাঠ্যক্রম ও গবেষণা পরিচালনা করতে পারবে। ফলে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুতরাং স্বনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি।
মোঃ আবদুল্লাহ আলমামুন
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা