45 বার পঠিত
গত মাসে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া সাতটি মেগা প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে একমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া বাকি ছয়টি প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ রকম প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং প্রকল্পগুলো যৌক্তিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে মেগা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করার এই তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় পর্যালোচনার কাজটি করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। অবশ্য অন্তর্র্বতী সরকার দেশের অর্থনীতির ওপর যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে, সেখানেও মেগা প্রকল্পের ওপর একটি পর্যালোচনা থাকবে। তাতে প্রকল্পগুলোর আদৌ দরকার ছিল কি না; কেন নেওয়া হয়েছিল এসব খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি খরচও পর্যালোচনা করা হবে।বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কিছু বড় প্রকল্প নেওয়া হয়, যেগুলো মেগা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রোরেল চালু, পদ্মা সেতু, চার লেন সড়ক এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু বেশ কিছু প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল বলে আলোচনা আছে। আবার বেশি অর্থ ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নতুন সরকার এখন এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা খুঁজছে। প্রাথমিকভাবে আইএমইডি কাজ শুরু করেছে।সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তাঁর মতে, আগের সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হলো, কিন্তু খরচের তুলনায় অর্থনীতিতে কতটা মূল্য সংযোজন করতে পারছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত জাহাজ চলাচল মসৃণ করতে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ কোটি ডলার (৬০০ কোটি টাকা) লাগবে। শোনা যাচ্ছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরোনো আমলের চুল্লির কারণে ইউরেনিয়াম বেশি লাগবে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেন চলে। এসব প্রকল্পে বিপুল অর্থ খরচ হয়ে গেছে।
অগ্রগতি কতটা
পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের তালিকায় আটটি প্রকল্প ছিল। গত জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প শেষ হয় ৩২ হাজার কোটি টাকায়। পুরো অর্থই জনগণের করের টাকা থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে মিরপুর ও ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। এখন চলছে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্প্রসারণের কাজ। মোট প্রকল্প ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। জুলাই পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এই প্রকল্পে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জাপানের জাইকা। শুধু টিকিট বিক্রির টাকায় এই ঋণ শোধ করতে ৪৫ বছর সময় লাগবে।বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ গত জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে একটি ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে এতে পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে এমন অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। দিনে ৪৮টি ট্রেন চলার কথা; কিন্তু চলে মাত্র ১০টি।
রাশিয়ার ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি শেষ হওয়ার কথা। গত জুলাই মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৬৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটির অন্যতম দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, ২০২৭ সালের শুরু থেকে বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হবে।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি দুইবার সংশোধনের পর খরচ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জানা গেছে, মোংলা বন্দর থাকা সত্ত্বেও ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে পায়রা বন্দর নির্মাণের উদ্দেশ্য, শুধুই রাজনৈতিক। নিয়মিত ড্রেজিং করা না হলে বন্দরটি কার্যকর করা কঠিন।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। তবে আপাতত মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। দিনে ২৬টি ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও চলছে মাত্র ৬টি।
জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর একটি মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই পর্যালোচনা শেষ হবে।